শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৩৬ পূর্বাহ্ন

ইংরেজ শাসনামলের অভিশপ্ত নিদর্শন বর্তমানে মেহেরপুরের গাংনীর দর্শনীয় স্থান।

তোফায়েল হোসেন
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
  • ৯৭৪ বার পঠিত

বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মুজিবনগর খ্যাত মেহেরপুরের গাংনীতে ভাটপাড়া নীলকুঠি অবস্থিত। এদেশে নীল চাষ পরিচালনার জন্য ইংরেজ শাসকগোষ্ঠী বিভিন্ন স্থানে কুঠি গড়ে তোলে যা নীলকুঠি নামে পরিচিত।

ব্রিটিশ শাসকদের নির্যাতনের স্মৃতিবিজড়িত সেই ঐতিহাসিক ভাটপাড়া নীলকুঠি এখন পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। এক সময় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সূতিকাগার মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভাটপাড়া কুঠিবাড়িতে অনেক পর্যটক গিয়ে ধ্বংসাবশেষ দেখে হতাশ হয়ে ফিরে যেতেন। অথচ বর্তমানে সেখানে গড়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন ইকোপার্ক।

গত কয়েক বছর আগেও কুঠি এলাকাটি ছিল মাদকসেবীদের আস্তানা। ঝোপঝাড়, ময়লা-আর্বজনায় ভরে ছিল এলাকাটি।

২০১৬ সালের শেষের দিকে কাজলা নদীর ধারের নীলকুঠি বাড়িটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন। ২০১৭ সালের শুরুর দিকেই এর কাজ শুরু করা হয়। ইতিমধ্যে কুঠিবাড়ি ঘিরে কৃত্রিম লেক, ঝর্ণাধারা, বিভিন্ন পশু-পাখির মূর্তি, খেলাধুলার সরঞ্জাম, পানি ও পয়নিষ্কাশনের ব্যবস্থা, চলাচলের রাস্তা, বাহারি সব ফুলের বাগান করা হয়েছে। সরকারী অর্থায়নে মুক্তিযুদ্ধ ও বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সরকারি সাহায্য ও সহযোগিতা পেলে পর্যটন কেন্দ্রটিকে দৃষ্টিনন্দন পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী জেলা প্রশাসন ও কুঠিবাড়ি সংশ্লিষ্টরা।

ইকোপার্ক এলাকার ‌‌মধ্যে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠেছে ফুলবাগান, কাল্পনিক ভূতের বাড়ি ও আইসল্যান্ড।

২৭ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত কুঠিবাড়িটির বেশকিছু জায়গা ভূমিহীনদের মধ্যে বরাদ্দ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে আবাসন কেন্দ্র। সেখানে ৯০টি পরিবারের বসবাস। ভগ্নদশা ৮০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৭০ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট মূল ভবনটি এখনও দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হিসেবে।

১৭৯৬ সালে এখানে নীল চাষ শুরু হয়। এ সময় বিখ্যাত বর্গী দস্যু নেতা রঘুনাথ ঘোষালির সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে গোয়ালা চৌধুরী নিহত হলে মেহেরপুর অঞ্চল রানী ভবানীর জমিদারীভুক্ত হয়। রানী ভবানী নিহত হলে কাসিম বাজার অঞ্চলটি ক্রয় করেন হরিনাথ কুমার নন্দী। পরে হাত বদল হয়ে গোটা অঞ্চলটি মথুরানাথ মুখার্জির জমিদারীভুক্ত হয়। এক সময় মথুরানাথ মুখার্জির সঙ্গে কুখ্যাত নীলকর জেমস হিলের বিরোধ হয়। অথচ মথুরানাথের ছেলে চন্দ্র মোহনই বৃহৎ অঙ্কের টাকা নজরানা নিয়ে মেহেরপুরকে জেমস হিলের হাতে তুলে দেয়।

বর্তমানে মূল ভবন ছাড়াও জেলখানা, মৃত্যুকূপ ও ঘোড়ার ঘরগুলো দাঁড়িয়ে আছে জরাজীর্ণ অবস্থায়। দামি মার্বেল পাথর আর গুপ্তধনের আশায় এলাকার প্রভাবশালীদের  ইন্ধনে ভেঙে ফেলা হয়েছে বেশকিছু স্থাপনা। এরই মধ্যে ভবনের বেশকিছু ইট ও পাথর চুরি হয়ে গেছে। দামি  ফলদ ও বনজ বৃক্ষ নিধন করা হয়েছে।

ইতোমধ্যেই সরকারী অর্থায়নে ভগ্নদশা ভবনটির কিছুটা সংস্কার করা হলেও তা পর্যটকদের কাঙ্খিত চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বলে জানান হোগলবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান বকুল।

বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও গাংনী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় এন্ড কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিয়ে কুঠিবাড়িটি পর্যটন কেন্দ্রে রূপ দিচ্ছে, এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের পূর্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে ও শিখতে পারবে। সেই সাথে চমৎকার একটি বিনোদনের সুযোগ পাবে দেশবাসী।

মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক ড. মনসুর আলম খান বলেন, ভাটপাড়া নীলকুঠির বেশকিছু জমি ইতিমধ্যে ভূমিহীনদের মধ্যে আবাসন প্রকল্পের মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।  এখনও যা আছে সেখানেই ডিসি ইকোপার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। তবে পর্যায়ক্রমে সরকারী সহযোগিতায় পার্কের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 gangnisongbad.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
ThemesBazar-Jowfhowo