মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ০৬ নম্বর ষোলটাকা ইউনিয়ন পরিষদের সরকারী ভিজিডি’র ভ্যান ভর্তি চাল আটক করেছে স্থানীয় জনতা। বৃহস্পতিবার দুপুরে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সহড়াবাড়িয়া গ্রামের মাঝামাঝি ব্রিজের নিকট থেকে তিনটি ভ্যানে ৪৫ বস্তা চাল আটক করে পুনরায় ইউনিয়ন পরিষদে ফিরিয়ে আনে স্থানীয় জনতা। কোন নথিপত্র নির্বাহ না করে চালগুলো ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কেন বাইরে নিয়ে যাওয়া হলো এমন প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার চালগুলো পুনরায় ইউনিয়ন পরিষদে সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন।
স্থানীয়ভাবে জানাগেছে, সকালে ০৬ নম্বর ষোলটাকা ইউনিয়ন পরিশোধ থেকে ৪০ বস্তা ভিজিডি’র চাল তিনটি ভ্যানে করে কেশবনগর, আমতৈল ও ষোলটাকা গ্রামে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় জনতা সন্দেয় করে ভ্যানগুলো আটকে দেয়। পরে ভ্যানগুলো আবারো ইউনিয়ন পরিষদে ফিরিয়ে আনা হয়। স্থানীয়রা ইউনিয়ন পরিষদে এসে জানতে পারেন কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে চাউলগুলো বিভিন্ন গ্রামে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। চালগুলো আটকের পর ইউনিয়ন পরিষদে এসে চেয়ারম্যান, সচিব, ট্যাগ অফিসার এমনকি সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যদের কাউকেই পাওয়া যায়নি বলেও অভিযোগ তোলেন স্থানীয়রা। তাছাড়া সহড়াবাড়িয়া গ্রামের মসলেম উদ্দিনের মেয়ে রাশিদা খাতুন অভিযোগ করে বলেন ফুড গোডাউন থেকে সরবরাহকৃত চাল খুবই নিম্ম মানের এবং খাওয়ার অনুপযোগী। আসন্ন রোজাতে এ চালের ভাত খেয়ে রোজা রাখা সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি । বিষয়টিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি আনোয়ার পাশা জানান, তিনি স্থানীয় জনৈক ব্যক্তির ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন। সরকারী কোন নিয়ম নীতি না মেনে চাল বিতরণের সত্যতা পান তিনি। ষোলটাকা গ্রামের গ্রাম পুলিশ ভরত দাস ভ্যানে ৪০টি চাউলের বস্তা তুলে দেয় যার প্রতি বস্তায় ৩০ কেজি করে চাল রয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিতরণ দেখিয়ে বের করে দেয়া চাল জনতার হাতে আটক হলে সে চালের মাষ্টাররোলে কারো কোন স্বাক্ষর বা টিপসহি নেয়া হয়নি। তাহলে একজন গ্রাম পুলিশ চেয়ারম্যান, সচিব, ট্যাগ অফিসার ও সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য অনুপস্থিতিতে কিভাবে চাল ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বের করে দিতে পারে ? এ প্রশ্নের সঠিক জবাব পাননি তিনি। এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে বিষয়টির সমাধান করার দাবী জানান তিনি।
৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আঃ গনি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এভাবে চাল নিয়ে যাওয়া টিক হয়নি। তিনি সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যদের সাথে বিষয়টি আলোচনা করে এর সঠিক সমাধান বের করা হবে বলে জানান তিনি। একই কথা জানিয়েছেন ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আঃ রউফ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য নুহু।
এ বিষয়ে ট্যাগ অফিসার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজান আব্দুল্লাহ আল মাসুম জানান, তিনি আজ দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে একটি চিঠি পেয়ে অবগত হয়েছেন তিনি ০৬ নম্বর ষোলটাকা ইউনিয়ন পরিষদের ভিজিডি’র চাল বিতরনের ট্যাগ অফিসার নিযুক্ত হয়েছেন। তিনি আজকের চাল বিতরণের বিষয়ে কিছুই জানেন না।
ষোলটাকা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান জানান, এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করার জন্য মেহেরপুর থেকে স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক এসেছিলেন আমি তার সাথে মাঠে ছিলাম তাই ইউনিয়ন পরিষদে থাকা সম্ভব হয়নি। তবে চাল বিতরণ বিষয়ে তিনি বলেন গত দুই দিন ভিজিডি তালিকাভুক্ত কয়েকজন ইউনিয়ন পরিষদে এসে চালের মান নিম্মমানের অভিযোগ দিয়েছে তাই চাল বিতরণ করা হয়নি। আজ তাদের বাড়ীতে বাড়ীতে চালগুলো পৌঁছিয়ে দিবে বলেই হয়তো চৌকিদার এ কাজটি করেছে।
গাংনী ফুড গোডাউনের কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) হাসান ছাব্বির জানান, তিনি চলতি বছরের জানুয়ারী মাসের ৭ তারিখে দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর থেকে কোন চাল ক্রয় করেন নি। তবে তিনি চালের মানের বিষয়ে বলেন, যে সময়ে সরকারী চাল সংগ্রহ করা হয়েছিল সে সময় খোলা বাজারে চালের দাম কেজি প্রতি প্রায় ৮/১০ টাকা বেশী ছিল। সে কারণে সরকারী টার্গেট পুরণ কষ্টসাধ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাছাড়া সংগ্রহীত চাল গাংনী খাদ্য গুদামে দীর্ঘদিন (বোরো মৌসুম/২০২০) মজুদ থাকার পরও রংয়ের কিছুটা পরিবর্তন হলেও মান ভাল রয়েছে এবং খাওয়ার উপযোগী।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আর এম সেলিম শাহনেওয়াজ জানান, স্থানীয় জনতার হাতে আটক হওয়া চাল গুলো আপাতত ষোলটাকা ইউনিয়ন পরিষদে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।