মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা পোস্ট অফিস থেকে মনোয়ারা খাতুন নামের এক গ্রাহকের ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা গায়েব হয়েছে। পারিবারিক সঞ্চয় বীমা গ্রাহক এ টাকা উত্তোলন না করলেও কুপনের মাধ্যমে এ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে বলে দাবী করেছেন পোস্ট মাষ্টার। তবে পোস্ট মাস্টারের এ দাবী অস্বীকার করেছেন গ্রাহক মনোয়ারা বেগম। এ ব্যাপারে তিনি আইনের আশ্রয় নেবেন বলেও জানিয়েছেন।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা পোস্ট অফিসে ২০১৭ সালে পারিবারিক সঞ্চয় বীমায় ৮ লাখ টাকা জমা করেছিলেন গাংনীর ধর্মচাকী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হান্নানের স্ত্রী মনোয়ারা খাতুন। যার হিসাব নং- ১৪৩১, বহিনং- পসপঘ-১০৯৯৩৪৬, পসপঙ-০৯৮০৩০১,পসপচ- ০৪৭৫৪৫৮,। সঞ্চয়পত্রে নমিনি করা হয় মনোয়ারা খাতুনের ছেলে আব্দুল হানিফকে। লাখ প্রতি ৯১২ টাকা মাসিক মুনাফা উত্তোলন করার কথা থাকলেও অদ্যাবধি তিনি কোনো টাকায় উত্তোলন করেননি। বছর দুয়েক আগে মনোয়ারা বেগম মুনাফার টাকা উত্তোলন করতে গেলে গাংনী উপজেলা পোস্ট মাস্টার নজরুল ইসলাম তাকে টাকা প্রদান করতে গড়িমশি করেন। বৃদ্ধ মনোয়ারা খাতুন অসুস্থ শরীর নিয়ে মাসের পর মাস ঘুরেও টাকা না পাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে পোস্ট মাস্টার নজরুল ইসলামের কাছে সঞ্চয়পত্র ও কুপন ফেলে চলে আসেন। কয়েকদিন পর তিনি সঞ্চয়পত্র ও কুপন আনতে গেলে পোস্ট মাস্টার কিছুই জানেন না বলে জানান।
মনোয়ারা খাতুন গাংনী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। যার নং-৫৪৯। তাং- ১৪/১১/২০২১ ইং। পরে পোস্ট অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তার হিসাব নম্বর থেকে ২ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা গায়েব হয়েছে গেছে। টাকা গায়েবের বিষয়ে কারণ জানতে চাইলে কুপনের মাধ্যমে মনোয়ারা খাতুনের নাতি ডিউক হোসেন এ টাকা উত্তোলন করেছে বলে দাবী করেন পোস্ট মাস্টার নজরুল ইসলাম । তবে ডিউক হোসেন বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তিনি নানি মনোয়ারা খাতুনের সঞ্চয় পত্রের নমিনি নন এবং টাকা উত্তোলনের বিষয়টি তিনি জানেন না বলে দাবী করেন। ডিউক হোসেন টাকা উত্তোলনের প্রমান দেখতে চাইলে তার কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি পোস্ট মাস্টার নজরুল ইসলাম।
মনোয়ারা খাতুন বলেন, আমার নমুনা স্বাক্ষর রয়েছে। আমার নমুনা স্বাক্ষর ছাড়াই টাকা প্রদান করল কিভাবে? আমার নাতি আমার সংসারে থাকে। সে ছাত্র । এতগুলো টাকা সে কি করবে? । আমি সর্বশেষ ৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার পোস্ট অফিসে গিয়েছিলাম। আমাকে পাত্তা দেয়নি। আমার সঞ্চয় পত্র থেকে পোস্ট মাস্টার নজরুল ইসলাম নিজেই টাকা উত্তোলন করেছে। আমি উক্ত টাকা ফেরত পেতে চাই।
মনোয়ারার স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হান্নান বলেন, বিষয়টি আমি জানার জন্য গাংনী পোস্ট অফিসে গেলে আমাকে কোনো ভাবেই সহযোগীতা করেনি পোস্ট মাস্টার। পরে কুষ্টিয়াতে যোগাযোগ করার পর জানতে পারি আমার স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের হিসাব থেকে বিভিন্ন তারিখে ২ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ডাক বিভাগ একটি রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার সাথে পরিচালিত হয়। সেখান থেকে টাকা গায়েব হবে কেন? আমি এর ন্যয্য বিচার চাই।
গাংনী উপজেলা পোস্ট মাস্টার নজরুল ইসলাম বলেন, পোস্ট অফিসে কোন লেজার, ভলিউম ইনক্লোজার ব্যবহার করা হয় না। কোন নমুনা স্বাক্ষর সংরক্ষণ করা হয়না। শুধুমাত্র গ্রাহকদের কুপন দেয়া হয়। উক্ত কুপন যিনি আমাদের প্রদান করবেন তিনিই টাকা পাবেন। তবে মনোয়ারা বেগমের নাতি ডিউক টাকা উত্তোলন করেেছ। উপজেলায় কতজন গ্রাহক এমন সঞ্চয় রেখেছেন তার পরিসংখ্যাণ নেই বলেও জানান নজরুল ইসলাম।
মেহেরপুর জেলা পোস্ট মাস্টার জহুরুল হক রানা বলেন, প্রতিটি সদস্যের রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। এবং প্রতিটি গ্রাহক সঞ্চয় খোলার সময় নমুনা স্বাক্ষর দিয়ে রাখেন। আমরা তা সংরক্ষণ করি। যারা কুপন নিয়ে আসেন তাদের নমুনা স্বাক্ষর যাচাই করা হয়ে থাকে। কুপন হাতে অন্যরা আসলেও মোবাইলের মাধ্যমে গ্রাহকদের সাথে কথা বলে নেয়া হয়। টাকা গায়েব হওয়ার বিষয়টি তার অজানা। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলেও আশ্বাস প্রদান করেন।
ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল(কুষ্টিয়া) খন্দকার মাহাবুব জানান, তিনি বিষয়টি জানেন না। গ্রাহকের আবেদন পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।