মেহেরপুরের গাংনীর বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে ভিজিডি’র সরবরাহকৃত চালের মান নিম্নমানের। এমনি অভিযোগের প্রেক্ষিতে খাদ্য গুদামে রক্ষিত চাল পরিদর্শন করেছেন সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার। মঙ্গলবার দুপুরে পরিদর্শক দলটি দুটি খাদ্য গুদাম পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। বাজার মূল্যের চেয়ে সরকারি কম দামে চাউল ক্রয় এবং দীর্ঘদিন মজুদ থাকায় চাউলের মান নষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, সম্প্রতি উপজেলার সকল ইউনিয়নের ভিজিডি কার্ডধারীদের মাঝেে গাংনী উপজেলা খাদ্য গুদাম থেকে নিম্নমানের চাল সরবরাহ করা হয়েছে। নয়টি ইউনিয়নে সরবরাহকৃত চাল নিয়ে বিপাকে পড়েন জনপ্রতিনিধিরা। অবশেষে অসহায় দুস্থরা অভাবের কাছে হেরে গিয়ে ওই চাল গ্রহণ করেন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আর এম সেলিম শাহনেওয়াজ অবগত হন। অভিযোগ পেয়ে মেহেরপুর- ২ (গাংনী) আসনের সংসদ সদস্য সাহিদুজ্জামান খোকন, উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ খালেক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আর এম সেলিম শাহনেওয়াজ ও উপজেলা কৃষি অফিসার কে এম শাহাবুদ্দিন আহমেদ খাদ্য গুদাম পরিদর্শনে যান।
গাংনী উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসান সাব্বির জানান, গেল মাসে ভিজিডির চাল সরবরাহ করার সময় জনপ্রতিনিধিরা চাল মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বিষয়টি অবগত হয়ে এ চাল ভিজিডির কার্ডধারীদের মাঝে বিতরণ যাতে করা যায় তার ব্যবস্থা করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেন।
খাদ্য বিভাগের একটি সুত্র জানায়, গেল বছর করোনাকালীন পরিস্থিতিতে খাদ্য সংকট দূর করার লক্ষ্যে সরকারি উর্দ্ধতন নির্দেশে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাউল ক্রয় করে গাংনী খাদা গুদাম কর্তৃপক্ষ। তবে চালের বাজার মূল্যের চেয়ে সরকারি দরের মধ্যে ছিল বড় ফারাক। ৩৬ টাকা কেজিতে গুদামে চাল কেনা হয় আর বাজারে চাউলের মূল্য ছিল ৪৪-৪৬ টাকা পর্যন্ত। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই মান সম্মত চাউল কেনা সম্ভব হয়নি। অপরদিকে দীর্ঘ ১০/১১ মাস গুদামে চাউল মজুদ থাকায় এর রং পরিবর্তন হচ্ছে এবং দিন দিন মান কমে যাচ্ছে। সংরক্ষণের ৩/৪ মাসের মধ্যে যদি চাউলগুলো ব্যবহার করা যেতো তাহলে মান নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকতো না।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরএম সেলিম শাহনেওয়াজ জানান, বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বরদের অভিযোগ পেয়ে ওসিএলএসডিকে জিজ্ঞাসা করা হয়। তিনি নিম্নমানের চালের বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি আরো জানান, চাল নিম্নমানের কিভাবে হয়েছে এবং এ চাল কোথা থেকে আনা হয়েছে সে বিষয়ে জানতে চান এবং কিভাবে সমাধান করা যায় তার ব্যবস্থা নিতে বলেন। কিন্তু আজো কোন সদুত্তোর পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি। চালের মানের প্রশ্নে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
উপজেলা চেয়ারম্যান এমএ খালেক জানান, জনপ্রতিনিধি ও দলীয় লোকজনের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে তিনি পরিদর্শনে এসেছেন। তিনি প্রমাণ পেয়েছেন চাল নিম্ন মানের। সমাধানের জন্য ওসিএলএসডিকে বলেন।
গাংনী আসনের সাংসদ সাহিদুজ্জামান খোকন জানান, বেশ কিছুদিন যাবত তিনি নিম্নমানের চালের ব্যাপারে শুনছেন। বিষয়টি তদন্তে এসে তার সত্যতা পান। তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরএম সেলিম শাহনেওয়াজকে পারবর্তী করণীয কি তার ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশ দেন।
উল্লেখ্য, বর্তমানে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে স্থাপিত ১ নম্বর খাদ্য গুদামে ৭৮.৭৮৬ মেট্রিকটন এবং ২নং গুদামে ১৫৪.৮৬০ মেট্রিকটন চাল মজুদ রয়েছে। যা আপাতদৃষ্টিতে খাবার অনুপযোগি বলে মনে হয়েছে জনপ্রতিনিধিদের কাছে।