আমরা নির্দোষ ছিলাম। আমরা কোন দোষ করি নাই। আমরা বিডিআর বিদ্রোহী না। ষোলটি বছর পেরিয়ে গেলেও আজ তার প্রমাণ হতে চলেছে আমরা নির্দোষ ছিলাম। আমরাও প্রত্যাশা করেছিলাম আমাদের ওপর থেকে বিডিআর বিদ্রোহী তকমা একদিন উঠে যাবে। কিন্তু সেদিন হয়তো থাকবে না শরীরে যৌবনের অদম্য সাহস ও শক্তি। কে ফিরিয়ে দেবে চাকরি ও জীবন থেকে ফুরিয়ে যাওয়া ষোলটি বছর? ওই বিডিআর বিদ্রোহ হত্যাকাণ্ডের সাথে যারা জড়িত ছিল প্রকৃত অপরাধীদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক। আমরাও তাদের বিচার চাই। অসহনীয় কষ্টের এ কথাগুলো বলেছেন মেহেরপুর জেলায় বিডিআর বিদ্রোহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করা বিডিআর জওয়ানরা।
সাবেক বিডিআর সিপাহী প্রধান সমন্বয়ক গিয়াস উদ্দিন জানান মেহেরপুর জেলার ৩৫ জন বিডিআর জওয়ানরা বিডিআর বিদ্রোহের মিথ্যা মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে জেল খেটেছেন। বিডিআর বিদ্রোহে অপরাধী হিসেবে কারা ভোগের কারণে আমাদের অনেকের স্ত্রীরা স্বামীকে তালাক দিয়ে অন্যত্র সংসার বেছে নিয়েছে। পিতা-মাতা পরপারে পাড়ি জমালেও তাদের মুখটি পর্যন্ত দেখতে পারি নাই। বিডিআর বিদ্রোহের তকমা লাগা ও চাকরিচ্যুত হওয়ার কারণে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে অতি আপনজনসহ আত্মীয়-স্বজনরা। জীবন হয়ে উঠেছে বিভীষিকাময়।
বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় বর্তমানে মেহেরপুর কারাগারে রয়েছেন দুইজন। তারা হলেন গাংনী পৌর এলাকার এক নম্বর ওয়ার্ড বাঁশবাড়িয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম ও আকবর আলী।
কারাগারে থাকায় স্বামীকে ছেড়ে অন্যত্র সংসার বেঁধেছে চারজন বিডিয়ারের স্ত্রী। বিডিআর জওয়ানরা হলেন- গাংনী পৌর এলাকার গিয়াস উদ্দিন, বাঁশবাড়িয়া গ্রামের আকবর আলী, উপজেলার কাজিপুর গ্রামের বাবর আলী ও হাড়াভাঙ্গা গ্রামের ফিরোজ আহমেদ।
বাবা মারা গেছেন ষোলটাকা গ্রামের মাহাবুব আলমের এবং মা মারা গেছেন বাঁশবাড়িয়া গ্রামের আকবর আলী ও উত্তর শালিকা গ্রামের আলমগীর হোসেনের।
সাবেক বিজিবি সিপাহী প্রধান সমন্বয়ক গিয়াস উদ্দিনের নেতৃত্বে ইতোপূর্বে মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জেল থেকে মুক্তি পাওয়া বিজিবি জওয়ানরা চাকুরীতে পুনর্বহালের দাবিতে একাধিকবার মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। মানববন্ধনে সাবেক বিডিয়ার সদস্য হাবিবুর রহমান, নাহিদ, বিল্লাহ হোসেনসহ অনেকে বক্তব্য রেখেছেন।
বক্তারা বলেন ২০০৯ সালে পিলখানায় ইতিহাসের বর্বরোচিত এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করে। তৎকালীন খুনি হাসিনার চক্রান্তে এবং ভারতী “র” বাহিনী দ্বারা এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়। তার প্রতিদানে পিলখানা সহ সকল ইউনিট সমূহে অবৈধ আদালত স্থাপন করে এবং সেই আদালতে ছিলোনা আমাদের বাক স্বাধীনতা, রাখা হয়নি কোন আইনজীবি নিয়োগের বিধান। এমনকি যিনি বিচারক তিনিই ছিলেন শাস্তি দাতা, যা পৃথিবীর কোন দেশেও হয়তো এমন নিয়ম নেই। আমরা অত্যন্ত অসহায় হয়ে পড়েছি। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ হাজার বিডিআর সদস্য ও তার পরিবার আজও অসহায় জীবনযাপন করছেন।
বক্তারা আরও বলেন, বিডিআর বিদ্রোহ ছিলো আওয়ামী লীগ সরকারের একটি জঘন্য পরিকল্পনা ও সাজানো নাটক। বিডিআরদের দেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করায় ছিলো এ পরিকল্পনার অংশ। এতে ভারত সরকার সরাসরি অংশ নেয়। পিলখানায় হত্যাকণ্ড হলেও দেশের বিভিন্ন জায়গায় থাকা বিডিআর ক্যাম্পে থাকা সদস্যদের আটক করে বিচারের আওতায় আনা হয়। এটি সম্পূর্ণ অমানবিক। সরকারের সাজানো নাটকের সুষ্ঠু তদন্ত চান তারা। শেখ হাসিনাসহ এ কর্মকাণ্ডে জড়িত সকলকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান বক্তারা।
ওই সময় পিলখানায় মেডিকেলে ভর্তি থাকা বিডিআর সদস্য হাবিবুর রহমান জানান, অসুস্থতার কারণে মেডিকেলে ভর্তি থাকার পরও তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। আনা হয় বিচারের আওতায়। রিমান্ডের নামে নেওয়া হয় আয়না ঘরে। সেখানে হাত, পা, মুখ বেঁধে চালানো হয় অসহনীয় নির্যাতন। এই আয়না ঘরে তাকে ৩১ দিন ধরে রাখা হয় বলে দাবি করেন তিনি। পরে বিচারের মাধ্যমে তাকে ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। অথচ এই ঘটনার কিছুই তিনি জানতেন না বলে দাবি করেন তিনি।
পিলখানার বর্বরোচিত নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পুনঃতদন্ত করে নিরপরাধ জওয়ানদের চাকুরীতে পুনর্বহালের দাবি জানান বক্তারা।