ছাত্রীদেরকে উত্ত্যক্ত করার অপরাধে গাংনী উপজেলার (HMHV) মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শামসুল হকের বিরুদ্ধে একাধিক অভিভাবকগণ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রীদের একাধিক অভিভাবকদের স্বাক্ষরিত অভিযোগ পত্রটি গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহার দপ্তরে জমা দেন। যথাযথভাবে সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অভিযোগ পত্রটি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হোসনি মোবারকের দপ্তরের প্রেরণ করা হয়েছে।
অভিযুক্ত শিক্ষক মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার হিন্দা গ্রামে অবস্থিত (HMHV) মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক পদে কর্মরত আছেন। ন্যায় বিচার না পেলে অন্য বিদ্যালয়ের ভর্তির কথা চিন্তা ভাবনা করছে লাঞ্ছিত শিক্ষার্থীরা।
হিন্দা গ্রামের শামসুল হকের ছেলে জুয়েল রানা বলেন, প্রধান শিক্ষক ও তার ভাই দুজনকেই স্থায়ীভাবে চাকরী চ্যুত করতে হবে। একই দাবিতে ফুঁসে ওঠে বিদ্যালয়ে জড়ো হওয়া অভিভাবক, জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় শত শত সাধারণ মানুষ।
ঘটনাটি এলাকার লোকমুখে ছড়িয়ে পড়লে সহকারী শিক্ষক শামসুল হকসহ তাকে এই বিদ্যালয়ে কুটকৌশলে নিয়োগ দেওয়া ও শামসুল হককে বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে টিকিয়ে রাখার দায়ে প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিমকেও স্থায়ী বরখাস্তের দাবি জানান শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী।
ন্যাক্কারজনক ঘটনায় অভিভাবকদের অনেকেই তাদের সন্তানকে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরিয়ে নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন।
ভুক্তভোগী একাধিক ছাত্রীর পিতা টুটুল হোসেন ও বকুল হোসেন তার অভিযোগে জানান, অভিযুক্ত শিক্ষক ছাত্রীদেরকে বিভিন্ন অজুহাতে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে ছবি তুলতে যায়, ছাত্রীদের গা ঘেঁষে বেঞ্চে বসে হাত ধরে চাপ দেয়, ছাত্রীদেরকে মোবাইলে অশ্লীল ছবি দেখানো চেষ্টা করেন। ছাত্রীদের শরীরে হাত দিয়ে মারধর করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।
এ সময় ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি দুলাল হোসেন অভিযোগ তুলে বলেন, প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিম নুথিপত্রে আমার স্বাক্ষর জাল করে বিভিন্ন অপকর্ম করেছেন। একই সাথে লক্ষ লক্ষ টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগও উঠে আসে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে।
জানতে চেয়ে অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক শামসুল হকের মোবাইল ফোনে বিকেল পৌনে ছয়টার সময় একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেন নাই।
মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির একাংশের সভাপতি রায়পুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, এ বিষয়ে আমি কিছুটা শুনেছি। সহকারী শিক্ষক এ বিষয়ে দোষী প্রমাণিত হলে তার অবশ্যই বিচার হোক এবং তার এ বিদ্যালয়ে না থাকাই ভালো।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হোসনি মোবারক জানান, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে সহকারী শিক্ষক শামসুল হকের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রীতম সাহা জানান, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও পরিবারের পক্ষ থেকে (HMHV) মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি যথাযথভাবে তদন্ত করার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সন্ধ্যায় এ বিষয়ে জরুরী ভিত্তিতে ম্যানেজিং কমিটির মিটিং করা হয়েছে। নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিধিমালা অনুযায়ী অভিযুক্ত শিক্ষককে ১০ কর্ম দিবস সময় উল্লেখ করে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রেরণ করা হয়েছে। কারণ দর্শানোর জবাব হাতে পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উৎদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দিতে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে অভিযুক্ত শিক্ষক ছুটিতে থাকবেন বলেও জানান প্রশাসনের ওই কর্মকর্তা।