মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ব্রজপুর কপ্নীপাড়া এলাকায় পূর্ববর্তী বিরোধকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। পরপর দুইটি মামলার অভিযোগের পর গ্রামে বিরাজ করছে আতঙ্ক ও থমথমে পরিস্থিতি।
প্রথম মামলাটি করেন ব্রজপুর কপ্নীপাড়া এলাকার সহকারী শিক্ষক ও পল্লী চিকিৎসক কামারুজ্জামান (৫৬)। তিনি ৪ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে গাংনী আমলী আদালতে সি.আর মামলা নং–৯০১/২০২৫ দায়ের করেন। মামলায় তিনি একই এলাকার ৬ জনকে আসামি করেন।
প্রথম মামলার অভিযোগে বাদী কামারুজ্জামান অভিযোগ করেন, ১৫ অক্টোবর ২০২৫ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তিনি একজন রোগীর বাড়িতে চিকিৎসা দিতে যাওয়ার সময় পূর্বের একটি মামলার আপোষ নিয়ে কথা বলায় আসামিরা ক্ষুব্ধ হয়। এরপর লোহার রড, শাবল, হাসুয়া ও লাঠিসহ হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বাদী কামরুজ্জামানের দাবি ১ নম্বর আসামি লোহার শাবল দিয়ে মাথায় আঘাত করতে গেলে তিনি হাত তুলে ঠেকালে কবজির হাড় ভেঙে যায়। ২ নম্বর আসামি লোহার রড দিয়ে তার পিঠ ও কোমরে আঘাত করে। পরে ৩, ৪ ও ৫ নম্বর আসামি কিল-ঘুষি-লাথি মেরে গুরুতর জখম করে। ১ নম্বর আসামি বাদীর গলার ওপর পা দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করতে চেয়েছিল বলেও অভিযোগ।
স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে গাংনী হাসপাতালে ভর্তি করেন। থানায় অভিযোগ দিলেও তা এজাহার হিসেবে গ্রহণ না করায় বাদী আদালতে মামলা করতে বাধ্য হন বলে উল্লেখ করেন। মামলায় তিনি দণ্ডবিধির ৩২৩/৩২৫/৩০৭/৩৫৫/৫০৬ (২) ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানান।
পাল্টা মামলায় প্রথম মামলার আসামিরা বিষয়টি জানতে পারার পর ১১ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে একই আদালতে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে সি.আর মামলা নং–৯২৮/২০২৫ দায়ের করেন। বাদী হলেন দাউদ হোসেন (৫৮)।
দাউদ হোসেনের অভিযোগ ১০ অক্টোবর ২০২৫ সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে অভিযুক্ত কামারুজ্জামান তাদের বাড়ির সামনে গিয়ে ২,৫০,০০০ টাকা চাঁদা দাবী করেন। তারা পূর্বের একটি মামলায় (জি.আর ১৯৯/২২) জড়িত থাকায় মামলার জামিন ও খালাসের বিনিময়ে এই টাকা দাবি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বাদী।
অভিযোগে আরও বলা হয় টাকা না দিলে খুন, জখম ও অপহরণের ভয় দেখানো হয়। বাদীর পরিবারকে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে আটকানোর হুমকি দেওয়া হয়। অভিযুক্ত লোহার এঙ্গেল দিয়ে হামলার চেষ্টা করলে সাক্ষীরা এসে উদ্ধার করেন।
বাদী দাউদ হোসেন দণ্ডবিধির ৩৮৫/৩৮৭ ধারায় (চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন) আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা চাওয়ার আবেদন করেন।
সামগ্রিক পরিস্থিতিতে দেখা যায় এক পক্ষের মামলা দায়েরের পর আরেক পক্ষের পাল্টা মামলা করায় গ্রামে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই মামলাই একই এলাকা, একই পরিবারের মানুষ এবং একই ধরনের আগের বিরোধকে ঘিরে হওয়ায় ঘটনাটি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে।
কামরুজ্জামান জানান, তার ওপরে প্রতিপক্ষরা হামলা করেছে, তিনি থানাতে গিয়ে কোন বিচার না পেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। আদালতে মামলা করায় প্রতিপক্ষরা তার উপরে আরোও ক্ষিপ্ত হয়ে রয়েছে। যে কোন সময় তার উপরে আবারও হামলার ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। এ বিষয়ে তিনি গাংনী থানায় জিডি করবেন বলেও জানান। প্রতিপক্ষরা তার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা চাঁদাবাজির কাউন্টার মামলা করেছেন। সুস্থ তদন্ত করে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি কামরুজ্জামানের।
প্রতিপক্ষ আমিরুল ইসলাম জানান, কামরুজ্জামান আমার প্রবাসী ভাইয়ের বাড়িতে আসতো। ভাই প্রবাসে থাকায় তাকে আমার ভাইয়ের বাড়িতে আসছে নিষেধ করা হয়। সে কারণে সেক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। তার হাত ভেঙেছে মোটরসাইকেলের এক্সিডেন্টে যার চিকিৎসা নিতে তিনি ভেলোর পর্যন্ত গিয়েছেন। অথচ মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদেরকে অযথা হয়রানি করছেন। সুস্থ তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
স্থানীয়রা জানান, উভয় পক্ষই প্রভাবশালী হওয়ায় এখন দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে ব্রজপুর এলাকা। পুলিশ ও গ্রামবাসীদের নজরদারির মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে।
মামলা পাল্টা মামলায় দুই পক্ষের বিরোধ আদালতে গড়িয়েছে। এখন তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা কী ছিল, তা আদালতই নির্ধারণ করবেন। তবে এলাকাবাসীর প্রত্যাশা দ্রুত তদন্ত, ন্যায্য বিচার এবং গ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে আসুক।