মেহেরপুরের গাংনীতে বিভিন্ন স্থানে লিচু ও আম রক্ষার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে কারেন্ট জাল। আর এই জালের ফাঁদে আটকে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে দেশীয় শত শত পাখি। নির্বিচারে পাখি হত্যার এমন ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে পাখি নিধন বন্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন পাখি প্রেমিকরা।
স্থানীয়রা জানান, লিচু ও আম লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই গাংনীতে বাড়ছে লিচু ও আম বাগানের সংখ্যা। আর এসব বাগানে পাকা ফল খেতে হানা দিচ্ছে দেশীয় বিভিন্ন ধরনের পাখি। লিচু ও আম বাগান পাখির হাত থেকে রক্ষায় চারদিকে উঁচু করে কারেন্ট জাল পেতে দেয় বাগান মালিকরা। বাগানের উপর দিয়ে পাখি উড়ে যাবার সময় অত্যন্ত স্বচ্ছ এ জালে জড়িয়ে আটকা পড়ছে দোয়েল, শালিক, বাদুড়, হুতুম পেঁচা, মাছরাঙ্গাসহ নানা ধরনের দেশীয় পাখি। সাথে আটকা পড়ছে অন্যান্য পাখিরাও। কারেন্ট জালের ফাঁদে আটকা পড়ে বেরুতে না পারা ও নড়াচড়া করতে না পেরে এক পর্যায়ে মারা যায় এসব পাখি।
গাংনী থানাপাড়ার কফেল উদ্দিনের ছেলে আলমগীর হোসেন জানান, এভাবে নির্বিচারে পাখি হত্যার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক ও প্রচলিত আইনের পরিপন্থী। পাখি নিধনকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি। একই কথা জানিয়েছেন মরহুম ইসলাম আলীর ছেলে ইনার আলী।
স্থানীয় পাখি প্রেমিক প্রাক্তন কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র ইনসারুল ইসলাম ইন্সু বলেন এভাবে কারেন্ট জাল বাগানের চারিদিকে ঘিরে নির্বিচারে যে পাখি হত্যা করা হচ্ছে তা খুবই দুঃখজনক। এভাবে চলতে থাকলে দেশীয় পাখি বিলীন হয়ে যাবে। এ বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।
গাংনী সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুল ইসলাম জানান, দেশীয় পাখি নিধন হলে আস্তে আস্তে দেশীয় পাখি বিলীন হয়ে যাবে। সেই সাথে পরিবেশের ভারসাম্য হারানোর ঝুঁকি বাড়বে। দেশীয় পাখি নিধন রোধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
লিচু ও আম বাগান মালিক হেলাল উদ্দিন জানান, পাখির উপদ্রব থেকে লিচু ও আম বাঁচাতে কারেন্ট জাল দিয়ে বাগান ঘিরে রাখা হয়েছে। জালে আটকিয়ে পাখি মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করলেও তিনি বলছেন, পাখি প্রচুর পরিমাণ ফল খেয়ে ফেলে, এতে তাদের আর্থিক ক্ষতি হয়। তাছাড়া ফল রক্ষা করা ছিল তার উদ্দেশ্য পাখি নিধন নয়। তিনি পাখি নিধনের বিষয়টি বুঝতে পেরে কারেন্ট জাল সরিয়ে নেবেন বলে জানিয়েছেন।
উপজেলা বন ও পরিবেশ বিভাগ কর্মকর্তা হামিম হোসেন জানান, অফিশিয়াল মিটিং এ তিনি কুষ্টিয়াতে রয়েছেন। পাখি নিধনের বিষয়টি দুঃখজনক। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আর এম সেলিম শাহনেওয়াজ জানান, পাখি নিধন এর বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।