নিখোঁজের প্রায় এক বছর পর মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রাম থেকে শিশু সন্তানসহ তার মাকে খুঁজে পেল স্বজনরা। সকল প্রমাণাদি পর্যাচলোনা করে শরিফা খাতুন (২৬) নামের ওই বাক ও মানষিক ভারসাম্যহীন প্রতিবন্ধি নারীকে তার শিশু সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
জানা গেছে, ১২ অক্টোবর মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার দেবীপুর বাজারে এক প্রতিবন্ধি গর্ভবতী নারী অবস্থান করছিল। সেসময় শিশুরা তাকে পাগলী ভেবে ইট পাটকেল ছুঁড়ে বিরক্ত করতে থাকে। ঘটনাটি দেখে উপজেলার তেতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের চককল্যাণপুর গ্রামের দিনমুজর মহাসিন আলী ও তার স্ত্রীর খুব মায়া হয়। ফলে তারা ওই প্রতিবন্ধী নারীকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। বাক প্রতিবন্ধী হওয়ায় পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
বাড়িতে নেওয়ার মাত্র দুই দিন পর (১৪ অক্টোবর) ওই প্রতিবন্ধি নারী একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। বিয়ষটি নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা সংবাদ প্রকাশের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেন। সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখতে পেয়ে ওই প্রতিবন্ধির স্বজনরা আশ্রয়দাতা ও স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করেন। ফলে স্থানীয় প্রশাসন বাক ও মানষিক প্রতিবন্ধি নারীর পরিচয় প্রকাশ করেন। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রতিবন্ধী ওই নারী নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার কুলিয়াটি গ্রামের মৃত আব্দুল হান্নানের মেয়ে।
প্রতিবন্ধি নারীর চাচা মনির হোসেন জানান, শরিফার আগে বিয়ে হয়েছিল। দুটি বাচ্চা হবার পর সে হঠাৎ মানষিক ভারসাম্য হারিয়ে বছর খানেক আগে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। বিভিন্ন জায়গায় খোজ করে তার কোন সন্ধান মেলেনি। কয়েকদিন আগে ফেসবুকের একটি সংবাদ নজরে আসলে আমরা শরিফাকে চিনতে পারি এবং শরিফার আশ্রয় দাতার মোবাইল নং যোগাযোগ ও স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে আমরা নেত্রকোনা থেকে মেহেরপুরের গাংনীতে এসেছি।
তিনি আরো জানান, বুধবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রীতম সাহা চককল্যাণপুর গ্রামে উপস্থিত হয়ে প্রতিবন্ধি শরিফা ও তার সন্তানকে হস্তান্তর করেছেন। আমরা মহসিন আলী ও তার পরিবার এবং প্রশাসনের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা বলেন, নাম পরিচয়হীন বাক ও মানষিক প্রতিবন্ধি ওই নারী ও তার সন্তানকে আমরা কুষ্টিয়া নারী ও শিশু পূর্ণবাসন কেন্দ্রে প্রেরনের জন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহন করেছিলাম। কিন্তুু তাকে পূর্নবাসন কেন্দ্রে পাঠানোর আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রচারিত খবর দেখে তার স্বজনরা চিনতে পারে এবং তাকে নিতে এসেছে। সঠিক তথ্য প্রমাণাদি পর্যবেক্ষণ করে স্বজনদের কাছে প্রতিবন্ধী শরিফা ও তার শিশু সন্তানকে হস্তান্তর করা হয়েছে। মা ও শিশু সন্তানকে হস্তান্তরের সময় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীতের কাপড় ও নগদ টাকা সহায়তা প্রদান করা হয়।
এ সময় বামন্দি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ওবায়দুর রহমান কমন, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আরশেদ আলী, গাংনী থানা পুলিশের এসআই জহির রায়হান, এলাকার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।