মেহেরপুরের গাংনীতে পৌরসভারসহ উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে অর্ধ শতাধিক ইটভাটা। ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কয়লা ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এ যেন এক অসুস্থ প্রতিযোগিতায় মেতেছে ভাটার মালিকরা। ফলে উজাড় হচ্ছে এলাকার গাছপালা ও বনাঞ্চল।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও বৈধতা না থাকার পরেও চলছে অনেক ইটভাটা। সব ভাটাতেই নির্বিচারে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। কয়লার দাম বেশি হওয়ায় জ্বালানি হিসেবে কাঠকেই বেছে নিচ্ছেন ইটভাটার মালিকরা। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন ইটভাটার আশপাশে বসবাসকারি কোমলমতি শিশুসহ হাজারো মানুষ। তাছাড়া বনাঞ্চল উজাড় হওয়ার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য হারাচ্ছে। মৌসুমী ফসলের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হাজারও কৃষক।
অধিকাংশ ইটভাটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ইটভাটার মালিকরা সেই সাথে মানা হয়নি ইটভাটা স্থাপনের শর্তগুলো। সংশ্লিষ্ট ইটভাটা মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে চলতি বছরে শুরুর দিকে ৪৩ টি ইটভাটায় গড়ে প্রতিদিন ২০ হাজার হাজার মন কাঠ খড়ি হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে। একই সাথে ভাটার নির্দিষ্ট স্থানে মজুদ রাখা হয়েছে হাজার হাজার মন কাঠের খড়ি। কাঠের খড়ি সংগ্রহ অব্যহত রয়েছে। আইনের তোয়াক্কা না করে কাঠখড়ি দিয়ে নির্বিঘ্নে পোড়ানো হচ্ছে ইট। এ ভাবেই চলতে থাকবে ইট পোড়ানোর পুরো মৌসুম।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ ও সংশোধনী ২০১৯ এ উল্লেখ করা হয়েছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নের স্বার্থে আধুনিক প্রযুক্তির ইটভাটা অর্থাৎ জিগজ্যাগ ক্লিন, হাইব্রিড হফম্যান ক্লিন, ভার্টিক্যাল শিফট ক্লিন, টানেল ক্লিন বা অনুরোপ উন্নততর কোনো প্রযুক্তির ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। তাছাড়া ইটভাটা শুরুর ও প্রথমে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র, জেলা প্রশাসকের অনুমোদন বা লাইসেন্স না নিয়ে ইটভাটা চালু করা যাবে না। অমান্য করলে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান থাকলেও উপেক্ষিত হচ্ছে এ আইনের বাস্তবায়ন। ফলে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জড়িয়ে রয়েছে নানা গুঞ্জন।
গাংনী ইটভাটা মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক বিশ্বাস ব্রিকসের মালিক চঞ্চল বিশ্বাস জানান, চলতি বছরে গাংনীতে ৪৩ টি ইটভাটা রয়েছে। কোনোটারই লাইসেন্স নেই। ২০১৩ সালের পর থেকে সরকার লাইসেন্স দিচ্ছেনা। তাই সব দিক ম্যানেজ করেই আগে যেভাবে চালানো হতো এ বছরও সেভাবেই ইটভাটাগুলো পারিচালনা করা হচ্ছে।
এদিকে এ এলাকার ৬টি পরিবেশ বান্ধব হাওয়া ভাটা রয়েছে। একটির মালিক জয়নাল আবেদীন জানান, আমি ২০১৭-১৮ সালে পরিবেশ ছাড়পত্র নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। হাওয়া ভাটায় খরচ বেশি হওয়ায় ফিট ভাটা ব্যবসার সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা জানান, আইন উপেক্ষা করে যে সকল মালিক ইটভাটা পরিচালনা করে চলেছেন ঊর্ধ্বতন ও কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে ওই ইটভাটা গুলোতে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।