মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটী ইউনিয়নের
ধর্মচাকী গ্রামে জমি নিয়ে বিরােধের জের ধরে দু’পক্ষ পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছে। শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) পৃথক সময়ে ও স্থানে সংবাদ সম্মেলন করেন তারা।
এদিন সকাল ১১টার দিকে ধর্মচাকী গ্রামের বিরোধপূর্ণ জমির বাঁশ বাগানে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন ওই গ্রামে আব্দুল লতিফের ছেলে ও দৈনিক সকালের সময় পত্রিকার প্রতিনিধি লিটন মাহমুদ এবং তার লােকজন।
সংবাদ সম্মেলন লিটন মাহমুদ বলেন, ধর্মচাকী গ্রামস্থ ৪২ শতাংশের একটি নালিশি জমিতে বাঁশবাগান রয়েছে। এ বাঁশ বাগান থেকে বাঁশ চুরির করা হয়েছে এমন মিথ্যা অভিযোগ তুলে গত ১২ ডিসেম্বর ধর্মচাকী গ্রামের বাসিন্দা দিন মজুর রুবেল হােসেনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরাে বেশ কয়েক জনের নামে গাংনী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন প্রতিপক্ষ গাংনী উপজেলার চেংগাড়া গ্রামের বিএনপি নেতা আব্দুল হালিমের ছেলে মাসুদুর রহমান।
গাংনী থানার এস আই আতিক তদন্ত করে গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বাঁশচুরির ঘটনা সত্য বলে জানালে অভিযোগটি ১২ ডিসেম্বর রাতে জি, আর ৩৪৭/২০২৩ মামলা হয় । যার মামলা নং-১৫। যার ধারা হলাে ১৪৩,৪৪৭,৪২৭,৩৭৯,৫০৬,১১৪।
মামলার পর থেকে গাংনী থানার এস আই আতিক আসামী দিনমজুর রুবেল হোসেনের বাড়ীতে অভিযান অবাহত রেখেছেন। এছাড়াও আসামীদের হুমকি দিচ্ছেন। লিটন মাহমুদ আরাে বলেন, এস আই আতিক বাদীর সাথে চুক্তি করে রুবেলসহ একাধিক ব্যক্তিকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছেন। এস আই আতিক শুধু মামলার পরামর্শ দিয়ে ক্ষান্ত হননি। তিনি আমাকে থানায় ডেকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। যা কােন সভ্য মানুষের আচরণ হতে পারে না। জমির প্রকৃত মালিক ধর্মচাকী গ্রামের মৃত আছালত মোল্লা। আছালত মােল্লার ওয়ারিশ আব্দুল লতিফ। লতিফের ওয়ারিশ সূত্রে আমি জমির মালিক আমি নিজে।
ধর্মচাকী মৌজার সি এস ১২৮ খতিয়ানভূক্ত ৪ একর ১০ শতক ও সিএস ১২৯ নং খতিয়ানে ১১ একর ৮১ শতক জমি নামদার মোল্লা বানাত মোল্লা নামে প্রচলিত থাকা অবস্থায় কিছু জমির এস এ রেকর্ড অন্যদের নামে হয়। সেই সময় আমার দাদা আছালত মোল্লা বাদী হয়ে ১৯৭৬ সালে গাংনী সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন এবং ১৯৮৬ সালে নিজের পক্ষে রায় পান।
আমার দাদার মৃত্যুর পর আমার বাবা আব্দুল লতিফসহ আমার চাচারা আবারো আব্দুল হালিম এর নামে হয়ে যাওয়া ভুল রেকর্ডের সংশোধন করার নিমিত্তে সহকারী জজ আদালতে দেওয়ানী ৬০/২০২৩ ও ১৪/২০২৩ মামলা করেছেন। বর্তমান মামলা দুটি বিচারাধীন রয়েছে।
লিটন মাহমুদ আরও জানান, গাংনী থানার এস আই আতিক বাঁশ কাটার অভিযোগ তুলে আমাকে থানায় আসতে বলেন। পরের দিন সকালে গাংনী থানায় উপস্থিত হয়ে জানাতে পারলাম আমার নামেসহ প্রতিবেশী রুবেল হোসেন, মতিয়ার রহমানের নামে আব্দুল হালিমের ছেলে মাসুদুর রহমান অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগের নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গাংনী থানার এস আই আতিক দু’পক্ষের লােকজনকে নিয়ে থানার সালিশে বসেন। সালিশে আলোচনার এক পর্যায়ে আসামি রুবেল হোসেন ১টি বাঁশ কেটেছি বলেও রুবেল কাটার কথা স্বীকার করে ক্ষমা চান। তারপরও আমার নাম জুড়ে রুবেলসহ কয়েকজনের নামে মিথ্যা মামলা করেন মাসুদুর রহমান। অথচ ওই বাঁশবাগানের জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। কাের্টে মামলার তােয়াক্কা না করে এস আই আতিক আমার সাথে মামলার কাগজপত্র চাই। আমি সেসব কাগজপত্র এস আই আতিকের হাতে দিলে, কিছু না পড়ে, তিনি কাগজপত্র ছুড়ে ফেলে দেন এবং আমাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। সেই সাথে আমাকে চুরির মামলা দিয়ে জেল খাটানাের হুমকি প্রদান করেন।
এ সময় এস আই আতিক আরাে বলেন, এ্যাডিশনাল ডিআইজি জয়নাল স্যারের নির্দেশ আছে। বাদীর পক্ষে স্যার ফোন দিয়েছিলেন। তাই বাদিকেই গুরুত্ব দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে রুবেল হোসেন বলেন, আমি কোদালের কোদালের আছাড়ি তৈরির জন্য চিকন একটি বাঁশ কেটেছিলাম। এজন্য আমি থানায় ক্ষমা চেয়েছিলাম। তার পরেও এস আই আতিকের পরামর্শে আমার নামে মিথ্যা ৬০টি বাঁশ কাটাসহ ১ লক্ষ টাকার বাঁশ তসরুপাত করার মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করেছেন মাসুদুর রহমান । তাই, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সাংবাদিকদের মাধ্যমে মেহেরপুর পুলিশ সুপার মহােদয়কে অনুরােধ করছি।
অপরদিকে, শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেলে গাংনী উপজেলা শহীদ মিনারের সামনে এই অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন চেংগাড়া গ্রামের মােসলেম হােসেনের ছেলে আব্দুল হালিম। তিনি বলেন, ধর্মচাকী মৌজায় আমার পিতার নামে ও আমাদের ওয়ারিশগণের নামে জমি রয়েছে। ওই জমিতে বাঁশবাগান ও মেহগনি বাগান রয়েছে। জমিদারি প্রথা অনুযায়ী খাজনা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তৎকালীন জমিদার উক্ত জমি নিজ নামে ফেরত নেন। পরবর্তীতে উক্ত জমি জমিদারের নিকট থেকে নতুন করে পূর্বপুরুষরা বন্দোবস্ত প্রাপ্ত হয়। তারপরে ভোগ দখল করে আসছি। কিন্তু উক্ত জমি বিবাদীগণের বাড়ির কাছে ওই জমি থাকার কারণে, তারা দফায় দফায় বাঁশ কেটে তছরুপাত করে আসছে। বিবাদী ধর্মচাকী গ্রামের লিটন এর আত্মীয়-স্বজনরা প্রতিনিয়ত বাঁশ কেটে আসছে। সেই সাথে হুমকি প্রদান করে আসছে। তাই,সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সংবাদ সম্মেলন বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।