কখনো প্রচন্ড ঠান্ডায় হাড় কাঁপানো শীত, কখনো তীব্র রোদ, আবার কখনো হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টিসহ নানা প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে এক পাল শূকর নিয়ে পথে পথে জীবন কাটাতে হয় ওদের। এ যেন এক যাযাবর জীবন। অভাবের সংসারে পরিবার পরিজনের ভালো থাকার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে এমন যাযাবর জীবন মেনে নিতে হয় তাদের।
শূকর মালিক অজয় মোড়লের মত ব্যক্তিদের সাথে মাসিক ১২ (বার) হাজার টাকা বেতন এবং প্রতিদিনের খাবার বাবদ ১৫০ টাকায় চুক্তি করে বছরের পর বছর পরিবার ছেড়ে শূকরের পাল নিয়ে পথে পথে জীবন কাটাতে ওদের। কোনো দুর্ঘটনার খবর পেলেই কেবল মাত্র পরিবারের কাছে ছুটে যাওয়া হয়। তা না হলে চুক্তিবদ্ধ সময় শেষে বছর ঘুরে খুব অল্প সময়ের জন্য যাওয়া হয় বাড়িতে। সারা বছরে হাতেগোনা কয়েকবার দেখা হয় স্ত্রী-সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের সাথে।
দীর্ঘ দশ বছর ধরে এমন এক অদ্ভুত ও বিচিত্র জীবন জীবিকা সম্পর্কে কথা বলছিলেন অপু মোড়ল (৩০) নামের এক শূকর পালক বা কর্মচারী। গত শনিবার (১০ ফেব্রুয়ার) দুপুরে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার দুর্লভপুর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর পাশে শূকর চরানোর সময় দাঁড়িয়ে কথা হয় তার সাথে। অপু মোড়ল ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার শামকুর গ্রামের অজয় মোড়লের ছেলে।
তিনি জানান, স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি ও পরিবারের সদস্যদের ফেলে শীত, রোদ, বৃষ্টি ও ঝড়সহ সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে খোলা আকাশের নিচে জীবন কাটাতে হয় ওদের। এমন কষ্টের জীবন আর ভালো লাগেনা। ইতোমধ্যে যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারা অনেকেই এ ধরনের পেশা পরিবর্তন করে নিয়েছে। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সাথে তাল মিলিয়ে সংসারের খরচ নির্বাহ করে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করাতে গিয়ে এ পেশা পরিবর্তন করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। একই রকমের কষ্টের কথা জানিয়েছেন কাজের সঙ্গী পালক ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার খালিশপুর গ্রামের নির্মল এবং একই উপজেলার বজরাপুর গ্রামের রাজকুমার।
শূকরের বিষয়ে কথা বলে আরো জানা গেছে, একটি প্রাপ্ত বয়স্ক শূকর বছরে দুইবার এবং প্রতিবার ৫ থেকে ৬ টি করে বাচ্চা দেয়। বয়স্ক শূকরের ওজন ৩০ থেকে ৫০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। শূকরের তেমন একটা রোগবালাই হয় না। যদিও বা কিছুটা হয় তা চিকিৎসা দেওয়ার মতো ওষুধ তাদের কাছেই থাকে। ২০০ টি শূকর নিয়ে প্রায় দুই মাস আগে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৩০০টিতে পৌঁছিয়েছে। স্থানীয় বাজারে শূকরের মাংস প্রতিকেজি পাঁচশত টাকা করে বিক্রী হয়। সারা বছরই শূকরের মাংসের চাহিদা রয়েছে তবে কালী পূজোর সময় এর চাহিদা অনেকাংশে বেড়ে যায়। বর্তমানে দেশের চাহিদা মিটিয়েও চীনসহ বহির্বিশ্বের একাধিক দেশে শূকরের মাংস রপ্তানি হয় বলেও জানান শূকর পালক অপু মোড়ল।