মাত্র ছয় দিন পর পবিত্র ঈদুল আজহা, মুসলমান ধর্মালম্বীদের বড় ধর্মীয় উৎসব। ঈদ উপলক্ষে কোরবানির পশু ক্রয় বিক্রয়ের জন্য শেষ দিকে হাটগুলো জমে উঠেছে। প্রতি বছর এ সময়ে ঈদকে সামনে রেখে কোরবানীর পশু বিক্রির অপেক্ষায় থাকে খামারীরা। গোখাদ্যের ঊর্ধ্বমূল্যের প্রভাবে দেশী গরুর চাহিদা থাকলেও দাম নিয়ে দুশ্চিন্তাই খামারি ও কৃষকরা। ফলে লোকসানের আশঙ্কায় দিন গুণছেন তারা। হাট ভর্তি কোরবানির পশু থাকলেও বিক্রি খুবই কম বলে জানিয়েছেন হাটে আসা স্থানীয় কৃষক ও খামারিরা।
প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বামন্দি হাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কোরবানির গরু-ছাগল পর্যাপ্ত থাকলেও বিক্রি হচ্ছে কম। এবার দাম নিয়ে ক্রেতাদের অভিযোগের পাল্লাটা কিছুটা ভারী। হাটে স্থানীয় কৃষক ও খামারিদের পালিত গরুই বেশী উঠেছে।
পশু হাট ঘুরে নজরে পড়ে নাই ইন্ডিয়া থেকে আসা কোন গরু। ফলে কৃষক ও খামারিদের পালন করা কোরবানির গরু ক্রয়-বিক্রয়ে দামের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়েনি। তবে গো খাদ্য বিচুলি, চালের গুঁড়া, খৈল, কাচা ঘাস খাইয়ে গুরু মোটাতাজা করছেন তারা। বর্তমানে গো-খাদ্যের ঊর্ধ্বমূল্যের ফলে কিছুটা বেশী দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে অতি যত্নে পালিত পশু। কোরবানিতে বিক্রির জন্য বড় বড় গরু প্রস্তুত করা হলেও তেমন সাড়া মিলছেনা ক্রেতাদের। ফলে লোকসানের আশঙ্কা করছেন খামারি ও কৃষকরা। কৃষক ও খামারিদের প্রত্যাশা অনুযায়ী যে গরু দেড় লাখ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা, সে গরু এখন বিক্রি হচ্ছে এক লাখ বিশ থেকে ত্রিশ হাজার টাকায়।
খামারি জিল্লুর রহমান বলেন, পারিবারিক খামারে ৩২টি গরু পালন করেছি। কোরবানির জন্য পশুগুলোকে প্রস্তুত করা হয়েছে। গো-খাদ্যের দাম বেশী ও তীব্র গরমে পশুপালণ করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে তিনি কাঙ্ক্ষিত দামে পরশুগুলোকে বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে বড় অংকের লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন।
ছাগল ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়াল বলেন, বামন্দি বাজারে বড় ছাগলের বেশি চাহিদা। বিভিন্ন গ্রাম থেকে ছাগলগুলা কিনে আনছি। ইদানিং গ্রামের প্রায় প্রতিটা বাড়িতে ছাগল পালন করে কোরবানি সামনে রেখে বিক্রি করে দেয়। এবার ছাগলের অনেক বেশী দাম। তিনিও এর কারণ হিসেবে অসুখ খাদ্য ঊর্ধ্বমূল্যকে দায়ী করেছেন।
গোপালনগর গ্রামের গরুর বেপারী আনেচ মিয়া জানান, এই বছর ক্রেতার উপস্থিতি ভালো থাকলেও তাদের সঙ্গে দামে পুষছে না। এখন গরু বিক্রি করতে পারবো কি না সেটা নিয়েও চরম দুশ্চিন্তায় আছি। একই কথা জানিয়েছেন স্থানীয় গাংনী পৌর এলাকার ৭ নং ওয়ার্ডের গরুর বেপারী মহাবুল ইসলাম ও শিশিরপাড়া গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান।
বামন্দি হাটের ইজারাদার আমিরুল ইসলাম শেখ বলেন, সপ্তাহে সোমবার ও শুক্রবার বামন্দিতে পশুর হাট বসে। মেহেরপুর জেলার বামন্দি হাট একটি ঐতিহ্যবাহী হাট। সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতা বিক্রেতারা এই হাটে তাদের পছন্দের পশু কিনতে জমায়েত হয়। পর্যাপ্ত পরিমাণে পশু ও ক্রেতার উপস্থিতি রয়েছে তবে কাঙ্খিত বেচাকেনা হচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে পশুর বেশী দাম ও গোখাদ্যের ঊর্ধ্বমূল্যকে দায়ী করছেন তিনি।
গাংনী পৌর এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শাহিনুল ইসলাম জানান, বামন্দি পশুরহাটে গরু কিনতে এসেছি। ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় একটি গরু কিনেছি। গত বছর এই হাট থেকে একই সাইজের একটি গরু ৮০ হাজার টাকায় কিনেছিলাম। তবে এবছর পশুর দাম অনেক বেশী। তারপরও কোরবানির জন্য একটি গরু কিনতে পেরে তিনি খুবই খুশি।
গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন আরিফুল ইসলাম জানান, গাংনী উপজেলায় কোরবানির জন্য যে পশু প্রস্তুত রয়েছে তা গাংনীসহ জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার কোরবানি পশুর চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তার দেয়া তথ্য মতে, উপজেলায় ৩২০ টি খামার সহ ১২ হাজার পরিবারে মোট ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩০২ টি কোরবানি ঈদের জন্য গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। তার মধ্যে গরু- ৪০ হাজার ৭৮০ টি,মহিষ-৪৩৫ টি ছাগল-৯৪ হাজার একশত ৫১ টি ও ভেড়া ১ হাজার ৯৩৬ টি।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা জানান, আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহার কোরবানীর পশু ক্রয় বিক্রয়ের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে হাটের ইজারাদারকে দেওয়া হয়েছে বিশেষ নির্দেশনা। গ্রাহকদের নিরাপদ সেবা প্রদান ও প্রতারণার ঝুঁকি এড়াতে একাধিক স্টল নিজ নিজ ব্যাংকের ব্যানারে বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছেন। রয়েছে ভেটেরিনারি মেডিকেল টীম। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পোশাকে পুলিশের বেশ কয়েকটি ইউনিটের সদস্যরা নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে সেবা দিচ্ছেন।