মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাজিপুর গ্রামে চলাচলের রাস্তায় বাঁশের বেড়া দিয়ে একটি পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি গাংনী থানাধীন বামন্দি পুলিশ ক্যাম্পের আইসিকে জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। শনিবার (২৯ জুলাই) কাজিপুর গোলাম বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রাস্তাটি বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়ার কারণে পরিবারের ৬ জন মানুষ ও গরু- ছাগল নিয়ে তিন দিন ধরে অবরুদ্ধ হয়ে রয়েছে পরিবারটি। এ বিষয়ে তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সোমবার (৩১ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এখন পর্যন্ত ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন ও গরু ছাগল অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।
ভুক্তভোগী উপজেলার কাজিপুর গোলাম বাজার এলাকার বাসিন্দা মরজেম হোসেন জানান, তিনি একজন গরীব অসহায় মানুষ। প্রায় ৪০ বছর ধরে বাপ দাদার আমল থেকে নিজের বসতভিটায় বসবাসসহ পাশে চলমান রাস্তা ব্যবহার করে আসছেন তিনি। তার বসতভিটায় প্রায় সাড়ে ৭ সতক জমি রয়েছে। এর মধ্যে আড়াই শতক নিজের কেনা জমি এবং পাঁচ শতক পিতার নিকট থেকে ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া জমি। গত শনিবার (২৯ জুলাই) দুপুরে প্রতিবেশী প্রবাসী ইলিয়াস হোসেনের স্ত্রী নাহিদা খাতুন, হেলাল, ইজুল মেলেটারি, ওমেদ আলীসহ বহিরাগত লোকজন নিয়ে চলচলের রাস্তাটিতে বাঁশের বেড়া দিয়ে আটকে দেয়। বাধা দিতে গেলে খুন জখম করে ফেলার হুমকি দেয় প্রতিপক্ষরা।
কাজিপুর ইউনিয়নের গোলাম বাজার এলাকার ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন জানান, শনিবার (২৯ জুলাই) দুপুরে হঠাৎ মরজেম হোসেনের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি প্রতিবেশী ইলিয়াস হোসেনের স্ত্রী নাহিদা খাতুনসহ তার সহযোগীরা বাঁশের বেড়া দিয়ে আটকে দিয়ে পরিবারটিকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। সরেজমিনে গিয়ে রাস্তা থেকে বাঁশের বেড়াটি সরতে গেলে তার সাথেও অশোভন আচরণ করেছেন। তিনি বিষয়টি কাজিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে অবহিত করে ব্যবস্থা নিবেন বলেও জানান।
অভিযুক্ত ওমেদ আলী বলেন, বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার গ্রামে সালিশ করা হয়েছে। মরজেম হোসেন জমির সীমানা নির্ধারণ না করে অপরিকল্পিতভাবে রান্নাঘর তৈরি করেছেন। সে কারণে রাস্তা নিয়ে স্থানীয় আরো একজন ব্যক্তি তার জমিতে যেতে পারছে না। বিধায় মরজেম হোসেনের রান্নাঘরের পিছন দিয়ে দুই হাত পরিমাণ রাস্তা রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা মানতে নারাজ। সে কারণেই ইলিয়াস হোসেনের বাড়ির পাশ দিয়ে মরজেম হোসেনের চলাচলের রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্থায়ী সমাধানের জন্য রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
কাজিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আলম হুসাইন জানান, কাজিপুর গোলাম বাজার এলাকার মরজেম হোসেনের একটি পরিবার ও গরু ছাগল তিনদিন ধরে অবরুদ্ধ হয়ে রয়েছে। বিষয়টি তিনি জানতে পেরে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বার ফারুক হোসেনকে সেখানে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু খুবই দুঃখের বিষয় প্রতিপক্ষরা ইউপি সদস্যের সাথেও অশোভন আচরণ করেছেন। আগামী বুধবার এ বিষয়ে কাজিপুর ইউনিয়ন পরিষদে সালিশ বৈঠকের আহ্বান করা হয়েছে। ইউপি সদস্যের সাথে আলোচনা করে তিনি এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলেও জানান।
এদিকে, বিষয়টি জানার পরও সোমবার বিকেল পর্যন্ত রাস্তাটি খুলে দেওয়ার জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্য ও ইউপি চেয়ারম্যান এমনকি পুলিশও কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলে জানিয়েছেন ভূক্তভোগী মরজেম হোসেনের পরিবার।
গাংনী থানা পুলিশের বামন্দি ক্যাম্প ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এস আই) শৈবুর রহমান জানান, রাস্তার সীমানা নির্ধারণ নিয়ে প্রতিবেশীদের মধ্যে বিরোধ চলছে। সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করেছেন তিনি। বিরোধের সমাধানে ভুক্তভোগী পরিবারকে তিনি আদালতে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন।