মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাজিপুর সীমান্তে নারী-পুরুষসহ ৩০ জন ও কাথুলী সীমান্তে শিশু, তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য এবং নারী-পুরুষসহ ৩০ জন এবং মুজিবনগর সীমান্তে নারী-পুরুষসহ ২৯ জন সর্মোবট ৮৯ বাংলাদেশীকে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিভিন্ন সময়ে কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়ন ৪৭ বিজিবির অধীনস্থ কাথুলী, কাজিপুর ও চুয়াডাঙ্গা ৬ বিজিবির অধীনস্থ মুজিবনগর এবং ভারতের বিএসএফ এর মধ্যে সীমান্তে কোম্পানী কমান্ডার পর্যায়ে এক সৌহার্দ্যপূর্ণ পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
পতাকা বৈঠকে মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার সীমান্তে কাথুলী কোম্পানি দপ্তর এর কমান্ডার সুবেদার মিজানুর রহমান ও ভারতের নদীয়া জেলার তেহট্টি থানার ৫৬ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের তেইনপুর কোম্পানি সদর দপ্তরের কমান্ডার এসি আনচ কুমার এর নেতৃত্বে এক পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে মেইন পিলার ১৩২/২ এস হতে বাংলাদেশের ৫ গজ ভারতে অভ্যন্তরে তেইনপুর নামক স্থানে ৩০ জন বাংলাদেশী নাগরিককে নথিপত্রসহ বিজিবির নিকট হস্তান্তর করা হয়।

পুশব্যাক হওয়া ব্যক্তিরা হলো
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পুরনধারপুর গ্রামের আব্দুল লতিফ শেখের মেয়ে রাবেয়া বেগম (৫৭), একই জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার বেজপাড়া গ্রামের আক্তার মন্ডলের ছেলে আমিরুল ইসলাম (২০), মেয়ে আয়েশা খাতুন (২৫), সদর উপজেলার মুখ গ্রামের সেকেন্দার শিকদারের ছেলে শানু শিকদার (৫৭), শুভহারা গ্রামের আলাউদ্দিনের স্ত্রী আরিফা সুলতানা (৩৫) বাঘারপাড়া উপজেলার কলারোয়া গ্রামের বাবু শেখের ছেলে সুমন (২৭), একই গ্রামের ইউসুব শেখের ছেলে ঈমান আলী (২১), পাবনা সদর উপজেলার বাগুডাঙ্গা গ্রামের মোস্তফা মোল্লার ছেলে ইসনাল (৪৫), ঈশ্বরদী গ্রামের আব্দুল মালিক মানিক এর ছেলে সাগর (২৮), একই গ্রামের আসাদুল ইসলামের মেয়ে শাপলা খাতুন (২৬), ঢাকার তেজগাঁওয়ের তেকুনঞ্জপাড়া গ্রামের নজির আহমদের ছেলে রুমি (৩৬), নড়াইলের কালিয়া উপজেলার জামিরডাঙ্গা গ্রামের সাদ্দাম হোসাইন শেখের স্ত্রী সুমি (৩২), ছেলে ইব্রাহিম (৯), অপর ছেলে হামজা (৬), মেয়ে আয়েশা (৬), অপর মেয়ে আমেনা (২), একই গ্রামের মাজাহার শেখের স্ত্রী মরিয়াম (৬৫), লোহাগাড়া উপজেলার লায়েক শেখের স্ত্রী ইতি খানম (২৭), মেয়ে আশারা মেহের জাবিন (৪), একই উপজেলার বিষ্ণপুর গ্রামের ইদ্রিস মোল্লার ছেলে রাজু (২৮), সদর উপজেলার তুলারামপুর গ্রামের মৃত উলারের স্ত্রী পারভিন বেগম (৪৬), খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার এতিম মোল্লার ছেলে আলী শেখ (৩৫), ছেলে আতিয়ার শেখ (৬), সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার আশুলিয়া গ্রামের ইসমাইল গাজীর স্ত্রী সুফিহা (৪২), নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা উপজেলার হাজিগঞ্জ গ্রামের শাহ আলমের স্ত্রী শাবনুর (৩২), ছেলে মেজবাহ খান (৬ মাস), জামালপুরের মিরান্দাহ উপজেলার আশিপাল গ্রামের আব্দুল সাদ্দাম শেখের স্ত্রী রহিমা বেগম (৬৫),
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার শুপ্তগ্রামের রাশেদ ফকিরের মেয়ে সীমা (৩০), অপর মেয়ে রুমা খানম (২৮) ও একই উপজেলার কাগজ পুকুর গ্রামের জুয়েল মোল্লার মেয়ে হাফিজা আক্তার (২২)।
আবার, শনিবার (২৫ অক্টোবর) বেলা ১১ টার দিকে কাজীপুর বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকার সীমান্ত পিলার ১৪৭ এমপি আট কবর নামক স্থানে জি আর-৭১৫৫০১ ম্যাপশিট-৭৯এ/৯, ১৪ পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন* কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়ন (৪৭ বিজিবি) এর জেসিও-৯৪৩৫ সুবেদার শাহাবুদ্দিন এবং সাথে ০৭ জন সদস্য।
ভারতের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ১১ ব্যাটালিয়ন বিএসএফ এর ইন্সপেক্টর এবিসন ফ্রাঙ্ক এবং সাথে ০৭ জন সদস্য।
পতাকা বৈঠকে বিএসএফ কর্তৃক ৩০ জন (পুরুষ-০৮, মহিলা-১৫ এবং টি জেন্ডার-০৭ জন) বাংলাদেশী নাগরিকদেরকে বিজিবি’র প্রতিনিধির নিকট হস্তান্তর করেন।
পুশব্যাক হওয়া ব্যক্তিরা হলোন
ড়াইলের কালিয়া উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের ইখলাস মিনার ছেলে সবুর(৪০), একই গ্রামের মোশারফ শেখের ছেলে ইয়াদুন(৩৮), একই উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের মাহমুদ মোল্লার স্ত্রী রাখি বেগম(৫০), জামিরডাঙ্গা গ্রামের জামাল মোল্লার স্ত্রী লক্ষ্মী বেগম (৪২), জয়নগর গ্রামের মোহাম্মদ মোস্তফার ছেলে মোহাম্মদ নুর ইসলাম (২৪), কালিয়া গ্রামের আবুবকর শেখের মেয়ে রিনি (৩৬), মাসুম মোল্লার মেয়ে সুখরণ (২৫), সাতক্ষীরার সোনাবাড়িয়া গ্রামের আনছার গাজীর স্ত্রী হনুফা (২৭), তালদিয়া গ্রামের আনিস শেখের মেয়ে তাসলিমা (৪৫), প্রতাপনগরের মোহাম্মদ মুকুলের মেয়ে মুন্নি সুলতানা (২৫), আজপাদা গ্রামের শামসুর মোল্লার মেয়ে কোহিনুর (৩০), বালিয়াখালি গ্রামের আজিজার গাজীর মেয়ে মারুফা খাতুন (২৯), চুয়াডাঙ্গা সদরের নাছিমা খাতুন (৩৫), যশোরের শার্শা উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের রফিক শেখের ছেলে মোহাম্মদ আলাউদ্দিন (২৭), গোগো কল্যাণী গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে আরিফুল ইসলাম(২৭), সন্তোষনগরের ফজলুর রহমানের ছেলে সুমন হোসাইন (৩০), কামখোলা গ্রামের রাজ্জাক শেখের ছেলে মারজিদ (৪৫), খুলনার সোনাহাট দীঘলিয়া গ্রামের নুর আলম হাওলাদারের ছেলে সাইম (১৯), ডুমুরিয়া গ্রামের আরশাদ শেখের স্ত্রী কুলসুম (৫৯), সদরের হাসমত আলীর মেয়ে জরিনা খাতুন (৩৬), ঢাকা কামরাঙ্গীরচর আগ্রাবাদ গ্রামের দিল মোহাম্মদের ছেলে আল আমিন (৩১), সুনামগঞ্জের বুড়িগঞ্জ গ্রামের ইদ্রিস মিয়ার মেয়ে জবা আক্তার (২৩), ভোলা সদরের চর ভাদারিয়া গ্রামের তুল হাসিমের মেয়ে ইয়াসমিন বেগম (২১), কিশোরগঞ্জের পুরানগাঁও গ্রামের রেনু মিয়ার ছেলে শাহাদাত হোসেন (২৭), মানিকগঞ্জ সদরের চরবিউত্তা গ্রামের আব্দুল বারেকের মেয়ে কোহিনুর ডাক্তার (৩৩),নোয়াখালীর সদ্দারবাদি গ্রামের মোঃ হোসাইন এর ছেলে মনির (৩৫), ফেনী চান্দিপুর গ্রামের মোস্তফা শেখের ছেলে নজরুল ইসলাম (৪৮), বগুড়ার নিমাইভাঙ্গী গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে আব্দুল (৩৫), হবিগঞ্জের ভাড়া গ্রামের রহিম খান (২০) ও পাবনা নবগ্রামের ইসমাইল শেখের মেয়ে নুসরাত (১৯)।

অন্যদিকে, চুয়াডাঙ্গা ব্যাটালিয়ন (৬ বিজিবি) এর মুজিবনগর কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার আবুল বাশারসহ সঙ্গীয় ফোর্স এবং প্রতিপক্ষ ১৬১ বিএসএফ হৃদয়পুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার ইন্সপেক্টর অনিল কুমার যাদব সহ-সঙ্গীও ফোর্স, এর মধ্যে মেইন পিলার ১০৫ এর নিকট বেলতলা শূন্য লাইন নামক স্থানে কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
পতাকা বৈঠক শেষে , বিএসএফের কোম্পানি কমান্ডার বিজিবি কোম্পানি কমান্ডারের নিকট বাংলাদেশী নাগরিকদের নথি পত্রসহ ২৯ জন বাংলাদেশীকে হস্তান্তর করেন।
পুশব্যাক হওয়া ব্যক্তিরা হল
যশোরের বেনাপোল উপজেলার ঢালিপাদা গ্রামের একামুল গানের ছেলে মিরাজ একরামুল গাইন (১৯), নারায়ণ গ্রামের ওসমান আলী মন্ডলের স্ত্রী আমিনা (৩৩), একই গ্রামের ইউনুস মোড়লের মেয়ে নার্গিস খাতুন (৩০), সেটাই গ্রামের লালন শেখের স্ত্রী রুনা সাখাওয়াত লালন (৩০), হিদিয়া গ্রামের রহমান মোল্লার মেয়ে সালমা রহমান মোল্লা (৩৩), একই গ্রামের আবুল খায়েরের মেয়ে আয়েশা (০২), লিয়াকত খানের ছেলে সুলতান (২০), দুরাঝাপ গ্রামের আকরাম শেখের মেয়ে জ্যোৎস্না (৩৫), জামিরডাঙ্গা গ্রামের ইসমাইল শেখের ছেলে আকরাম ইসমাইল (২২), একই গ্রামের আকাশ গাজীর ছেলে শেকু (৪০), আব্দুল গাজীর স্ত্রী আসমা (৫১), রানাগাতি গ্রামের ইমান আলীর ছেলে বাকি বিল্লাহ (২৪), সেরুলি গ্রামের কাওসার শেখের মেয়ে নাজমা খাতুন (৩৬), ঝিকরগাছা গ্রামের মশিয়ার রহমানের ছেলে তুহিন (৩৯), বাধানল গ্রামের মসিব শেখের মেয়ে রোকসানা (৪৫), দাওয়াতখালী গ্রামের মুসলিম সরদারের মেয়ে মমতাজ (৪৫), একই গ্রামের রফিক মন্ডলের মেয়ে রেহেনা (২৪), ছেলে উজ্জ্বল (৪৫), তারাপুর গ্রামের সবুজ মোল্লার ছেলে জসিম (৩৪), একই গ্রামের জসিম মোল্লার স্ত্রী মোরশেদা (২৩), তারাপুর গ্রামের আবুল মোল্লার ছেলে রানা মোল্লা (৩১), অগ্রভুলাট গ্রামের শাজাহান আলীর মেয়ে পায়েল (৩৩), ঝিনাইদহ সদরের উলাকল গ্রামের জাহারুল গাজীর মেয়ে সুপ্রিয়া (২৮), গোয়াগারি গ্রামের আব্দুল বারেকের মেয়ে জমিলা শচীন (৩৭), কুমিল্লার কাকের তলা গ্রামের আব্দুল শেখের ছেলে বিল্লাল হোসেন (৪৩), মৌলভীবাজারের দক্ষিণ সাগর গ্রামের সোনামিয়ার স্ত্রী সুমাইয়া (২৫), ঢাকা কদমতলীর বাড়ির নাম্বার তিন নুসরাত জাহান (২৫),
চট্টগ্রাম হাটহাজারী আব্দুল করিম সওদাগর হাউজ আব্দুল হকের ছেলে নুরুল আলম (৩৬) ও ঢাকা মোহাম্মদপুরের সিদ্দিকুর রহমানের মেয়ে জান্নাতুল (৪১)।

পুলিশ ও বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরের দিকে মেহেরপুর জেলার কাজিপুর, কাথুলী ও মুজিবনগর সীমান্তে ৮৯ জন অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে পতাকা বৈঠকে মাধ্যমে হস্তান্তর করা হয়। হস্তান্তরকৃতরা সকলেই বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। বিভিন্ন সময়ে তারা অবৈধভাবে ভারতে পাড়ি দিয়েছিল। সেখানে থাকা অবস্থায় ভারতীয় পুলিশ তাদের আটক করে। পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিজিবির কাছে ফেরত দিয়েছে বিএসএফ সদস্যরা। বিজিবি কাজিপুর ও কাথুলী ক্যাম্প জানিয়েছে ভারত থেকে আসা সকলকে গাংনী থানায় সোর্পদ করা হয়েছে। একই সাথে বিজিবি মুজিবনগর ক্যাম্প জানিয়েছে ভারত থেকে আসা সকলকে মুজিবনগর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয়ের অংশ হিসেবে এ ধরনের পতাকা বৈঠক দুই দেশের মধ্যে আস্থা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করছে বলেও জানান বিজিবি’র ওই সকল কর্মকর্তা।
আটককৃতদের মধ্যে ৩৭ জন পুরুষ, ৪৩ জন নারী, ৬ জন তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য এবং ৩ জন শিশু রয়েছে বলে জানা গেছে।
গাংনী থানা অফিসার ইনচার্জ বানী ইসরাইল ও মুজিবনগর অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান জানান, ভারত থেকে নারী শিশুসহ ৮৯ জন বাংলাদেশী নাগরিককে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। আঠকদের গাংনী থানা ও মুজিবনগর থানা পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। আটকদের নিজ নিজ পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। পরিবারের লোকজন এসে পৌঁছালে তদন্ত শেষে মুসলেকা নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে।