মেহেরপুর সদর উপজেলার রাজনগর গ্রামে শাপলা ফুল তুলতে গিয়ে একই পরিবারের দুই জনসহ চার কন্যা শিশুর মৃত্যু হয়েছে। রোববার (৯ নভেম্বর) বেলা আড়াইটার দিকে মশুরীভাজা বিলে এই হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা উদ্ধার কাজ শেষ করেন বিকেল পাঁচটার দিকে।
স্থানীয় আখতারুজ্জামান জানান, শিশুরা ডিঙি নৌকায় চড়ে বিলে শাপলা ফুল তুলতে যায়। এক পর্যায়ে অসাবধানতাবশত নৌকাটি উল্টে গেলে তারা বিলের পানিতে ডুবে যায়। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও তাদের খোঁজ না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা চারপাশে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরে বিলের ধারে পড়ে থাকা স্যান্ডেল দেখে তাদের সন্দেহ হয়।
এরপর স্থানীয়রা বিলের পানিতে একজন শিশুর মরদেহ ভাসতে দেখতে পায় এবং তাৎক্ষণিকভাবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে খবর দেয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করেন এবং একজনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেও মারা যায়।
নিহত চার কন্যা শিশু হল— ফাতেমা খাতুন (১৪) বারাদি-মমিনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ও তার সহোদর বোন আফিয়া (১০) স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী তারা দুজনেই রাজনগর গ্রামের আব্দুস সামাদের মেয়ে। আলেয়া খাতুন (১০) স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী ও রাজনগর গ্রামের শাহারুল ইসলামের মেয়ে। অপরজন মীম আক্তার (১৪) সে বারাদি মমিনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী এবং রাজনগর গ্রামের ইছাহক আলীর মেয়ে। তারা সকলেই পরস্পর চাচাতো বোন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, বহু খোঁজাখুঁজির পর বিকেল ৫টার দিকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ও ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় চার শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মেহেরপুর ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার শামীম হোসেন জানান, রাজনগর গ্রামের স্থানীয়দের ফোন পেয়ে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের একটি টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। আফিয়া নামের এক কন্যা শিশুকে উদ্ধার করে মেহেরপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মেহেরপুর সদর থানা অফিসার ইনচার্জ শেখ মেজবাউদ্দিন জানান, রাজনগর গ্রামের মসুরি ভাজা বিলে শাপলা ফুল তুলতে গিয়ে চারজন কন্যা শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
এই মর্মান্তিক ঘটনায় রাজনগর গ্রামে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া। এলাকাবাসীর চোখে-মুখে এখনো শোকের ছাপ।