মেহেরপুরের গাংনীতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সেজে বেশ কয়েকটি হোটেল ও রেঁস্তোরা ব্যবসায়ীদের কাছে মোবাইল ফোনে মোটা অংকের চাঁদা দাবী করেছে প্রতারক চক্র। এর সাথে গাংনী উপজেলা স্যানেটারী অফিসার মশিউর রহমান সরাসরি জড়িত কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
গাংনী হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দীন জানান, আজ সোমবার (০৪ এপ্রিল) দুপুরে গাংনী হাসপাতালের সেনেটারী অফিসার মশিউর রহমান দোকানে এসে মোবাইল ফোনটি হাতে দিয়ে কথা বলতে বলেন। ফোনটি ধরার সাথে সাথে সহকারী কমিশনার ভূমি পরিচয় দিয়ে বলেন, আপনার মোবাইল নাম্বার দেন। আমার ফোন নাম্বার পাওয়ার পর ০১৯২৩-৮৯১৬১৭ নাম্বার থেকে একটি কল আসে। উক্ত মোবাইল নাম্বারটিতে ৫০ হাজার টাকা বিকাশ করার জন্য বলা হয়। অন্যথায় মোবাইল কোর্ট বসিয়ে দোকান বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। একই কথা জানিয়েছেন গাংনী সুইটস এর মালিক শাজাহান আলী, আমিন মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক রাশেদুল ইসলাম ও সুবহান হোটেলের মালিক আব্দুস সোবহান।
হোটেল রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দীন আরো জানান, ঘটনাটি তার কাছে সন্দেহজনক মনে হলে তিনি সরাসরি গাংনী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমুল আলমের সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি মোবাইল ফোনের বিষয়টি কিছুই জানেননা এবং মোবাইল নাম্বার দুটি তার নয় বলে জানান। তিনি সেনেটারী অফিসার মশিউর রহমানকে তার অফিসে ডেকে নেন। বিষয়টির সমস্ত কিছু শুনে তিনি তাৎক্ষণিকভাবের্্যাব-৬ গাংনী ক্যাম্পের সাথে যোগাযোগ করে প্রতারক চক্রের বিষয়টি অবগত করান। সেই সাথে ব্যবসায়ী ও সেনেটারী অফিসারকে আইনের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দেন।
এব্যাপারে গাংনী উপজেলা স্যানেটারী পরিদর্শক মশিউর রহমান জানান, দুপুরে তিনি অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছিলেন। এমন সময় ০১৯৩৩-২১২১২০ মোবাইল নাম্বার থেকে গাংনী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) পরিচয় দিয়ে একটি কল আসে। দ্রুত হোটেল রেস্তোরাঁর কয়েকজন মালিকের সাথে কথা বলিয়ে দেওয়ার জন্য বলা হয়। সেই মোতাবেক তিনি উক্ত নাম্বারটিতে ফোন করে প্রথমে মালেক ফল ও মিষ্টি ভান্ডার এবং পরে গাংনী সুইটসের মালিকের সাথে কথা বলিয়ে দেন। যে মোবাইল নাম্বারে কথা বলিয়ে দেওয়া হয়েছে সেই নাম্বার থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকের নিকট থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করা হয়েছে। অন্যথায় মোবাইল কোর্ট বসিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে। তিনিও এর সাথে জড়িত কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পালন করেছেন মাত্র। তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না।
তিনি যে নাম্বারে কথা বলিয়ে দিয়েছেন সে নাম্বারটি এসিল্যান্ডের নাম্বার কিনা ? বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া দরকার ছিল কিনা? এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর মেলেনি।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, এ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি গ্রহণ করা হয়েছে। সাধারণ ডায়েরি নাম্বার ১৫০. তারিখঃ ০৪/০৪/২০২২ ইং
এ ব্যাপারে জেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর (ডিএসআই) তাজিমুল হক জানান, আমি যতদূর জানি মশিউর রহমান একজন সচেতন অফিসার। যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটা ঘটা উচিত হয়নি। কারণ এসিল্যান্ড এর মোবাইল নাম্বারটা নিশ্চিত হওয়া দরকার ছিল। বিষয়টি নিয়ে তিনি মশিউর রহমানের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন।
মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডাঃ জাওয়াহেরুল আনাম সিদ্দিকী এমন ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে জানান, সেনেটারী ইন্সপেক্টর মশিউর রহমানের এমন বোকামি কাজ করা আদৌ উচিত হয়নি। এসিল্যান্ড এর মোবাইল নাম্বারটি তিনি নিশ্চিত হতে পারতেন।