উপজেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর রেজাউল হককে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগে চড়-থাপ্পড় মেরে উৎকোচের টাকা ফেরত দিতে বাধ্য করেছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম। সেই সাথে রেজাউল হকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে নাসরুল্লাহ আল জাদীদ। সোমবার (৪ মার্চ) দুপুরে উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরে মনা আলীর চায়ের দোকানের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগকারী নাসরুল্লাহ আল জাদীদ জানান, তার নানা আবু তাহের প্রায় ২০ বছর আগে বালিয়াঘাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন। গত ফেব্রুয়ারী মাসের ১৪ তারিখে তার নানা পেনশনরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ফলে পেনশন গ্রহীতার নাম পরিবর্তন করে নানী তাহেরুন্নেসার নামে পেনশনের বইটি চালু করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সেজন্য রোববার (৩ মার্চ) উপজেলা শিক্ষা অফিসের কেরানি রেজাউল হকের নিকট গিয়ে পরামর্শ চাইলে তিনি দুই হাজার টাকা ফরম কেনার অজুহাতে গ্রহণ করেন। বিভিন্ন অফিসে তদবিরের জন্য আরো দশ হাজার টাকা দাবি করেন।
বিষয়টি পীরতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাহাবুর রহমানকে কথা প্রসঙ্গে জানালে তিনি আমাকে বলেন, এ বিষয়ে তো কোন টাকা লাগার কথা না। রেজাউল হক কেন টাকা নিয়েছে আগামীকালকে বিষয়টি দেখব। আজ সোমবার (৪ মার্চ) দুপুরে উপজেলা পরিষদের মধ্যে মনা আলীর চায়ের দোকানের সামনে শিক্ষক সমিতির নেতা মাজহারুল ইসলাম, শিক্ষক হাসানসহ একাধিক শিক্ষকের উপস্থিতিতে রেজাউল হক কেন টাকা নিয়েছে জানতে চাইলে তার সদুত্তোর দিতে পারে নাই। ফলে টাকাটি ফেরত দিয়ে কাজটি আন্তরিকতার সাথে করে দেয়ার অনুরোধ জানান তারা।
এ সময় শিক্ষক নেতা ও রেজাউল হকের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে সেখানে চড়- থাপ্পড়ের ঘটনা ঘটে। তিনি আরো জানান এ উৎকোচ নেয়ার ঘটনায় তিনি রেজাউল হকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
শিক্ষক নেতা মাজহারুল ইসলাম জানান, উপজেলা শিক্ষা অফিসের কেরানি রেজাউল হক উৎকোচ গ্রহণের দুই হাজার টাকা ফেরত দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে নাতি নাসরুল্লাহ আল জাদীদ।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর রেজাউল হক জানান, আমি ভুল করেছি, এজন্য আমি সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থী। শিক্ষক নেতা মাজহারুল ইসলাম আমার ছেলের মত। আমার উপর চড়- থাপ্পড় মেরে সে হয়তো একটা ভুল করে ফেলেছে। এতে আমার কোন অভিযোগ নাই।
গাংনী উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিন জানান, রেজাউল হকের ওপর চড়-থাপ্পড় বা তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার বিষয়ে তিনি কোন লিখিত অভিযোগ করেননি। তবে রেজাউল হকের বিরুদ্ধে উৎকোচ বা ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম শাহা জানান, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর রেজাউল হকক লাঞ্ছিত করার বিষয়ে কোনো তথ্য আমার জানা নাই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জানা যাবে। তবে তার বিরুদ্ধে উৎকোচ বা ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টির সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রুহুল আমিন জানান, গাংনী উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিন বিষয়টি আমাকে মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। ঘুষ নেওয়া অপরাধ। সত্যতা প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।