মেহেরপুরে বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে উত্তেজনা ও মাতামাতি শুরু হয়েছে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে রাত জেগে ফুটবল খেলা দেখা ও নিজ সমর্থনকারী দল গোল দিলে চিৎকার করে আনন্দ উল্লাস প্রকাশের বিষয়টি অনেক পুরানো। আরো কয়েকটি দলের সমর্থক থাকলেও ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা এই দল দুটিকে নিয়েই মেহেরপুরের মানুষের মধ্যে বেশি মাতামাতি দেখা যায়। অতিতে ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনাকে ঘিরে এ জেলার মানুষ দুভাগে বিভক্ত হয়। এবারেও তেমনই প্রতিফলন ঘটেছে মেহেরপুর জেলা ও উপজেলা ও প্রান্তিক পর্যায়ের সব গ্রাম ও মহল্লায়। শুধু নিজ দলকে সমর্থন না, প্রতিপক্ষ দলের সাপোর্টারদের কটুক্তি করে কিভাবে ঘায়েল করা যায় সেটারও এক ধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে সমর্থকদের মধ্যে। জেলার মানুষের মধ্যে আনন্দ, উল্লাস ও মাতামাতির তীব্রতা বাড়ছে। বিশ্বকাপ ফুটবল খেলাকে ঘিরে গ্রাম ও পাড়া মহল্লাগুলো বিভিন্ন পতাকায় সেজেছে নতুন রূপে।
বিশ্বকাপ খেলা দেখার জন্য গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, পাড়া ও মহল্লায় এবার প্রজেক্টরের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে চোখে পড়ার মতো। বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা ক্রীড়ামোদিদের মধ্যে অন্যরকম আনন্দ ও উল্লাসের আমেজ নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে। জেলা ও উপজেলা শহর ছাড়াও রাস্তার দুই পাশে, বিভিন্ন ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নানা সাইজের পতাকা টাঙ্গিয়ে কোন দেশের সমর্থক তা প্রকাশ করছে ক্রীড়ামোদি ফুটবল ভক্ত ও সমর্থকরা। এজন্য দর্জিদের বাড়িতেও কর্মব্যস্ততা বেড়েছে ।
আসন্ন ফুটবল বিশ্বকাপের উম্মাদনা, মাতামাতি, আনন্দ ও উল্লাসের হাওয়া লেগেছে মেহেরপুরের বিভিন্ন এলাকার দর্জিদের দোকানে। ফুটবল ভক্ত দর্শকদের নানা আকারের পছন্দের দেশের পতাকা ও জার্সি বানাতে ব্যাস্ত সময় পার করছে তারা।
দর্জিরা বলছেন, আধুনিক পোশাকের ভীড়ে ঈদ ও বিশেষ দিন গুলোতে ছাড়া দর্জির দোকানে ক্রেতাদের ভীড় তেমন লক্ষ্য করা যায় না। তবে বিশ্বকাপ ফুটবলকে কেন্দ্র করে পছন্দের দলের জন্য পতাকা ও জার্সি বানাতে ক্রেতাদের ভীড় চোখে পড়ার মত। ক্রেতাদের চাহিদা মাফিক পতাকা ও জার্সি সময়মতো ডেলিভারি দিতে তারাও যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছে সে জন্য দিনে ও রাতে কাজ করে যাচ্ছে।
সরোজমিনে জেলার দর্জিদের দোকান গুলো ঘুরে দেখা যায়, আসন্ন ফুটবল বিশ্বকাপকে সামনে রেখে পতাকা বানানোর হিড়িক চলছে সকল দর্জির দোকান গুলোতে। মাঝারি ধরণের পতাকা বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ৩০০ টাকা, ছোট আকারের পতাকা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা আর বড় আকারের পতাকা বানাতে ১৭০ টাকা হাত হিসেবে ধরা হচ্ছে।
৩০ বছর ধরে দর্জি কাজের সাথে জড়িত গাংনী উপজেলা শহরের বোম্বে টেলার্সের স্বত্বাধিকারী আলাউউদ্দিন জানান, তিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে দর্জি পেশায় রয়েছেন। মানুষের এখন সব রেডিমেট পোশাক কেনার দিকে ঝোঁক বেশি। তাই দর্জির দোকানে মানুষের আসা কমে গেছে। আমারা বিশেষ করে দুই ঈদে ও নতুন স্কুল ড্রেস বানানোর সময় কাজের কিছুটা চাপ বেড়ে যায়। কিন্তু আসন্ন বিশ্বকাপ ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দোকানে এখন পতাকা ও জার্সি বানানোর চাপ বেড়ে গেছে। তিনি আরো জানান, সবচেয়ে বেশি চাহিদা আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলের। জার্মানি ও ইংল্যান্ডের পতাকার চাহিদা তুলনামূলক ভাবে কিছুটা কম। সেই সাথে বাংলাদেশের পতাকার চাহিদাও কিন্তু কম নয়। একই কথা জানিয়েছেন মেহেরপুর জেলা শহরের আরেক উদ্দিন ও কাজিপুর সীমান্ত এলাকার ইন্তাজ আলী।
বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা শুরুর আর মাত্র এক দিন বাকি। দেরিতে হলেও চার বছর পর বিশ্বকাপের খেলাগুলো উপভোগ করার জন্য এ জেলার মানুষ প্রস্তুত। অনেকেই ইতিমধ্যে নিজ দলের জার্সি ও পতাকা সংগ্রহ ও বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে জেনারেটর প্রস্তুত করেছেন।
এতোমধ্যেই গ্রাম অঞ্চলের মাচায় মাচায় চলছে কোন দলের চ্যাম্পিয়ান হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু এবং খেলোয়াড়দের নিয়েও চলছে নানা ধরনের বিশ্লেষণ। এছাড়াও বিভিন্ন দলের সাপোর্টাররা ফেসবুকে নতুন নুতন গ্রুপ খুলে তাদের দলের পক্ষে প্রচার-প্রচারনায় নেমে পড়েছে।
আরেক ধরনের প্রতিযোগিতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে সমর্থকদের মাঝে, সেটা হলো কে কত বড় পতাকা বানাতে পারে। নিজ নিজ বাড়ির ছাদে পতাকা টাঙিয়ে জানান দেয়া হয় কে, কোন দলের সমর্থক। বাংলাদেশের রাস্তা, বাড়ি ও মাঠ-ঘাট এখন বিভিন্ন দেশের পতাকায় ছেয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ও আর্জেন্টিনার পতাকা টাঙ্গিয়ে গ্রামের রাস্তার দুই পাশ ছেয়ে ফেলেছে এমন একজন ক্রীড়ামোদি ফুটবল প্রেমিক ও যুব সম্প্রদায়ের নেতা গাংনী উপজেলার বানিয়াপুকুর গ্রামের হাবিবুর রহমান জানান, এবারের বিশ্বকাপ ফুটবল খেলাকে ঘিরে ৮০-৯০ জন যুবককে নিয়ে আর্জেন্টিনা সাপোর্টার টিম গঠন করেছেন তিনি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ও আর্জেন্টিনার পতাকা দিয়ে গ্রামের দেড় কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশ ছেয়ে ফেলেছেন। এখনো পতাকা বানিয়ে শেষ করতে পারেনি দর্জি। সারা গ্রাম তিনি বাংলাদেশ ও আর্জেন্টিনার পতাকা দিয়ে ছেয়ে ফেলার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সেই সাথে এবারের বিশ্বকাপ ফুটবল খেলায় আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ান হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন। প্রতিদিন খেলা দেখতে আসা দর্শকদের জন্য খিচুড়ির ব্যবস্থা থাকবে বলে জানান তিনি। তাছাড়া নিজ দলের শুভকামনা করে দল জিতলে ছাগল জবাই করে মাংস দিয়ে খিচুড়ি খাওয়ানোর প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।